কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার দাম কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৮:১১ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে, এ অজুহাত দেখিয়ে দেশে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিসংখ্যান ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনেকটাই স্থিতিশীল এবং কিছুটা বাড়তির দিকে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পরিকল্পিতভাবে চামড়ার দাম কমানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
ঈদে চামড়ার দাম কত হবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতিতে চামড়ার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইনডেক্স মুন্ডি ডটকম সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমেনি, বরং তা কিছুটা বাড়তির দিকে। সামনের সময়ে তা আরো বাড়বে বলেই অনুমান করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। গত জুনে প্রতি পাউন্ড চামড়ার দাম ছিল ১ ডলার ৮ সেন্ট, জুলাইয়েও এ দাম অব্যাহত ছিল। আগস্টে চামড়ার দাম ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়ে। তবে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ সেন্ট কমেছে। বাংলাদেশ যাদের কাছে চামড়া রফতানি করে, সেসব দেশে এর দাম কম বলে জানিয়েছেন তারা।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্যমতে, চামড়া রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। পরিকল্পনার তুলনায় অন্তত ৩৭ শতাংশ কম চামড়া আগস্ট পর্যন্ত রফতানি হয়েছে বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের খুব বেশি হেরফের না হওয়ায় এমনটা ঘটছে বলে সংশিষ্টরা জানান। গত বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে এ পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তারা।
এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। ব্যবসায়ীরা জানান, দুই মাস আগেও যেখানে প্রতিটি ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর চামড়ার দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, তা বর্তমানে ৮০০-৯০০ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে ৪ হাজার ২০০ টাকার বড় গরুর চামড়া এখন ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকার মহিষের চামড়া এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার ছাগল-ভেড়ার চামড়া ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। কোরবানিতে চামড়ার দাম কেমন হবে, তা ঈদের দু-তিনদিন আগে জানা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর কোরবানি এলে চামড়া ও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সিন্ডিকেট করে দাম কমান। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত দুই মাসে চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি। কোরবানির চামড়ার প্রকৃত দাবিদার দেশের এতিম-মিসকিনরা। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দাম কমানো হলে এ জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আলী হোসেন বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা ভালো অবস্থানে নেই। অনেকেই ঋণের দায়ে জর্জরিত। চামড়ার গুণাগুণ ঠিক না থাকার কারণেও দাম কমতে পারে। চামড়া সংগ্রহের ৬ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দেয়া হলে গুণাগুণ ভালো থাকে। কিন্তু ট্যানারিতে চামড়া আসে দু-তিনদিন পর। এতে চামড়া অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে কোরবানিতে সারা দেশে ৬৫ লাখ ৩৯ হাজার ২০৮টি গবাদিপশু জবাই করা হয়। এর মধ্যে গাভী বা বকনা গরু ৯ লাখ ৪১ হাজার ৪৩৪টি, ষাঁড় বা বলদ ৩৩ লাখ ১২ হাজার ৮৫১, ছাগল বা ভেড়া ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ ও অন্যান্য ৩৮ হাজার ৩৭টি পশু জবাই হয়েছিল।
দেশের মাংস ব্যবসায়ীদের হিসাবমতে, কোরবানিতে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও উট জবাই করা হয় প্রায় ৮০ লাখ। আর সারা বছর গবাদিপশু জবাই করা হয় ৭০ লাখের মতো। এসব চামড়ার বিপুল অংশ বিক্রি হয় ট্যানারি মালিকদের কাছে।