খরায় পুড়ে ছাই চা বাগান, উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাবৃষ্টিতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে চা শিল্প। পাতা উত্তোলন মৌসুমের শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাই, চা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও রাজনগরে আছে ৯২টি চা বাগান। তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে মরে যাচ্ছে চা গাছ। প্রুনিং (ছাঁটাই) করা ডালে গজাচ্ছে না নতুন কুঁড়ি। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-বালাই। এ নিয়ে হতাশ চা সংশ্লিষ্টরা।
জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৪ মিলিমিটার। ২০২৪ সালে একই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪৬ মিলিমিটার।
মৌলভীবাজাররের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতা নেই চা গাছে। খরায় মরে গেছে প্রুনিং করা গাছ। কিছু কিছু জায়গায় দেয়া হচ্ছে সেচ।
চা বাগানের একটি সূত্র জানান, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চা শিল্পেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চা গাছ মরে যাওয়ার প্রধান কারণ প্রতিকূল আবহাওয়া। তাদের মতে চা গাছের ছায়াদানকারী গাছ উজাড় বন্ধ করা ও চা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, নালা, খাল খনন করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।
চা শ্রমিক অনিতা কুর্মি বলেন, চা গাছে পাতা নেই। পানির অভাবে মরে যাচ্ছে গাছগুলো। সারাদিনে ৩ থেকে ৪ কেজি পাতা তুলতে পারিনি। আর পাতা তুলতে না পারায় মজুরিও ঠিকমতো পাচ্ছিনা। এখন সংসার চালানো কষ্টকর।
আরেক চা শ্রমিক সাথি বাউরী বলেন, এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। বাগানে নতুন কুঁড়ি না থাকায় আমাদের কাজ-কর্ম কমে গেছে। মজুরিও কমে গেছে। পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দিবে না।
ফিনলে টির ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার জিএম শিবলী বলেন, প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে চা বাগান। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় আছি। তবে যদি কিছুদিনের মধ্যে ভাল বৃষ্টি হয়, তাহলে কিছুটা কেটে উঠা যাবে। এই দুযোর্গ মোকাবেলার জন্য সেচ প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
মৌলভীবাজার আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, এই সময়ে চা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চ মাসে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ চলতি বছরের মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
টি প্লেন্টার্স এন্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চা শিল্প বৈরী আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা রক্ষা করতে হলে কৃত্রিমভাবে বিন্দু বিন্দু পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। খরায় বেশিরভাগ বাগানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাছ মরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, চা শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এবছর চা উৎপাদেনের লক্ষমাত্রা ১০৩ মিলিয়ন কেজি। খরা যেহেতু মৌসুমের শুরুতে এসেছে। এতে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও বাকি মৌসুমজুড়ে কাজ করলে কাটিয়ে উঠা যাবে। খরায় গাছ মরে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে ছায়াতরু রোপণ, ইয়াং চা গাছে প্রুনিং ও গাছের গোড়ায় কচুরিপানা দিয়ে খরা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছি। এই পদ্ধতি প্রয়োগ না করলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। প্রতিবছর আগাম প্রস্তুতি নিলে এটি কাটিয়ে উঠা যাবে।