ফাগুয়া উৎসবই চা জনগোষ্ঠির আনন্দের একদিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
নানা বঞ্চনা আর দু:খ কষ্ঠে দিন কাটা চা শ্রমিকরা একদিনই উৎসবে মেতে উঠেন। ফাগুয়া উৎসবেই মেতে উঠলেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। নাচ, গান, হলিখেলাসহ নানা আয়োজনে সামিল হন বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা। আনন্দময় এই উৎসবে মেতে উঠেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। চা শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষায় এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আয়োজকরা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত উৎসবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফাগুয়ার রঙ আর কাটি নৃত্বের ছন্দে মাতোয়ারা চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান থেকে আসা শ্রমিকরা জড়ো হন ফুলছড়া মাঠে। একে অপরের সাথে দীর্ঘদিন দেখা মেলায় মেতে উঠেন ফাগুয়ার উৎসবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম, বালিশিরা চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সালাউদ্দিন, চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল বাড়াইক, ফাগুয়া উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সদস্যসচিব অনিল তন্তুবায় প্রমুখ।
চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা গুরুবন্দনা (ভোজপুরি), কুমুর দ্বৈত (বাড়াইক), হালি গীত (ভোজপুরি), পত্র সওরা (উড়িষ্যা), ডাল ও কাঠি নৃত্য (তেলেও), চড়াইয়া নৃত্য (উড়িষ্যা), কমেডি (ভোজপুরি), হাঁড়ি নৃত্য (উড়িষ্যা), ঝুমুর (মাহাতো কুর্মী), বিরহা, হোলি গীত (ভোজপুরি), হোড়কা বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে, হোলি গীত (গড় সম্প্রদায়) ইত্যাদি পরিবেশন করে।
চা শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ফাগুয়া। একে কেন্দ্র করে চা বাগানের অলিতে গলিতেও ছড়িয়ে পড়ে এর আমেজ। এমন বৈচিত্রময় উৎসবে সামিল হতে আসেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
উৎসব দেখতে আসা ফাল্গুনী রায় বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগল। চা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখলাম। কত রঙিন এই উৎসব। এসে অনেক আনন্দ পেয়েছি।
রাধা নগর থেকে আসা আসমা বলেন, ফাগুয়া আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। দুর্গাপূজার পর এটিই চা বাগানের বড় উৎসব। আমরা চা শ্রমিক না হলেও এই উৎসবে অনেক আনন্দ করি। আমরা তাদের উৎসবে এসে আনন্দ পাই।
চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক বলেন, চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা ভাষাভাষী মানুষ আছে। আলাদা আলাদা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আছে। ধীরে ধীরে চা জনগোষ্ঠীর অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার এসব সংস্কৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগী না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে। তারা চা জনগোষ্ঠীর জন্য সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার দাবি জানান।
ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের প্রীতম দাশ বলেন, মৌলভীবাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা–বাগান আছে। এসব বাগানে সবচেয়ে বেশি চা জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাঁদের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি আছে। চা শ্রমিকদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে তাঁরা নানা সময়ে অনুষ্ঠান করে থাকেন। ফাগুয়া উৎসব বড় হওয়ায় বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, দেশের ৯২টি চা বাগানের সিংহভাগই মৌলভীবাজারে অবস্থিত। বাংলা নববর্ষকে গিরে বড় পরিসরে চা জনগোষ্ঠির ফাগুয়া উৎসব উদযাপনের উদ্যোগ নেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। দেশের চা-শ্রমিকেরা সারা বছর বিভিন্ন সমস্যায় ভোগলেও উৎসবের দিনগুলোতে মেতে উঠেন আনন্দে। প্রতিবছর জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এই উৎসব অব্যাহত থাকবে।