মৌলভীবাজারে সাধারণ মানুষের মধ্যে মামলা ভীতি : স্বস্তির বদলে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ৫:২৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে মামলা বাণিজ্য, নিরপরাধ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। খোদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকেই এই অভিযোগ সামনে আনা হয়েছে। নেতৃত্বের এই অংশটি মামলা বাণিজ্যসহ নিরপরাধ মানুষকে মামলায় হয়রানির বিরুদ্ধে এরইমধ্যে মানববন্ধন করেছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মৌলভীবাজারে একাধিক মামলার ঘটনা ঘটেছে। এখনো নতুন করে মামলা হচ্ছে। এসকল মামলায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে এই মামলাগুলোতে এমন সব ব্যক্তির নাম যুক্ত করা হচ্ছে। এই অভিযুক্তদের দাবি, তারা এসব ঘটনার সাথে যুক্ত ছিলেন না। এরফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মামলাভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। কে কখন মামলার জালে ফেঁসে যান, অনেকের মধ্যেই এখন এই ভয় কাজ করছে। নতুন পরিস্থিতিতে স্বস্তির বদলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
মামলার সূত্র, অভিযুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মৌলভীবাজারে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসকল মামলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। কিন্তু অভিযোগ ওঠেছে, এসকল মামলায় আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীর বাইরে এমন সব লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। যারা দাবি করছেন, মামলায় যেসব ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম ঘটনার সাথে তারা জড়িত ছিলেন না। তাদের কেউ বলেছেন, তারা ওইদিন উল্লেখিত ঘটনাস্থলেই যাননি। কেউ অন্য কোনো স্থানে ছিলেন। কেউ বাসাতে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার সাথে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও মামলায় আসামি হওয়ায় তাদেরকে এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। এখনো মামলা করা থামেনি। বিরতি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে মামলা হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতা, ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও হয়রানি করতে মামলাতে জড়ানো হচ্ছে। এসব মামলার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এখন মামলা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। কে কখন কোন মামলায় ফেঁসে যাবেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভয় ছড়িয়ে পড়েছে।
মামলা বাণিজ্য ও নিরপরাধ লোকজনকে হয়রানি বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি (২৪ নভেম্বর) মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সাধারণ জনতার ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। এই মানববন্ধন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে মামলা বাণিজ্য, নিরপরাধ মানুষের উপর মামলা, আসামিদের ছাড়িয়ে নেওয়ার তদ্বিরে জড়িত সমন্বয়ক নামধারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। ওইদিন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একই দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জাবেদ রহমান পূর্বদিককে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলের পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে একটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে। যার বাদী আব্দুল কাদির। বাকী মামলাগুলো ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই করেছেন। এর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা প্রশাসনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আর মামলা না নিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারপরও পুলিশপ্রশাসন মামলা নিচ্ছে। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনে জড়িত ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতাদের ইন্দনে অনেক মামলা হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্ম বিতর্কিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মো. ইয়ামীর আলী বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জুলুমের শিকার ছাত্ররা মামলা করেছেন। এতে অনেকই আসামী হয়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে ছাত্রদের উপর হামলায় যারা জড়িত নয় তারা যাতে হয়রানীর শিকার না হয় এজন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। প্রশাসন এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আশা করি নিরপরাধ ব্যক্তিরা তদন্তের মাধ্যমে মুক্তি পাবেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম নাসের রহমান সম্প্রতি হওয়া মামলার ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই মামলা কে করেছে? এখন আবার কিসের মামলা? তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নেবেন বলেও জানান।