মৌলভীবাজারে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের মিছিল ও আলোচনা সভা
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ নভেম্বর ২০২৪, ৬:৫৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মহান রুশ বিপ্লবের ১০৭-তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন রুশ বিপ্লব দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সামনে মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রথ প্রদর্শন করে। মহান রুশ বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে দেশে দেশে সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার আহবান জানান বক্তারা। গতকাল সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া। সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাস, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা ও কোষাধ্যক্ষ হেমরাজ লোহার, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন ও গোবিন্দশ্রী আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ আবু সুফিয়ান প্রমূখ। আলোচনা সভা পূর্বে একটি মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন মহান রুশ বিপ্লবের অজেয় ও অমর শিক্ষাকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদী অন্যায়যুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং বাংলাদেশের মত নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত করে বিশ্ব বিপ্লব তথা সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্য আজ পৃথিবীর সকল শোষিত মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ। বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও বিপথগামি করতে সর্বাত্মক তৎপর রয়েছে সকল রূপের সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদীরা। ‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ব্যর্থ, সমাজতন্ত্র ব্যর্থ এবং পুঁজিবাদ শ্বাশ্বত ও সংকট মুক্ত’ বলে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ও সকল রূপের সুবিধাবাদী-সংশোধনবাদীরা যে প্রতিবিপ্লবী প্রচারাভিযান চালিয়েছিল তার বেঠিকতা প্রমাণিত হচ্ছে সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় চলমান দীর্ঘস্থায়ী মন্দা ও সংকটের মধ্য দিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বলশেভিক পার্টির গঠন প্রক্রিয়া থেকে সকল রূপের সংশোধনবাদ-সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে পার্টি গড়ে উঠেছিল। আজকেও আমাদের দেশের সংশোধনবাদীদের তৎপরতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্ব, শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব ও মহান কমরেড স্টালিনের অবদানকে অস্বীকার করে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ পথে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের হালুয়া রুটির অংশীদার হওয়া। ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম এবং বর্তমান কঠোর বাস্তবতায় রুশ বিপ্লব তথা সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা আরো সামনে আনছে, সামনে আনছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী বিকল্পকে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি তথা শ্রমিকশ্রেণি বলপ্রয়োগে বুর্জোয়াশ্রেণিকে উৎখাত করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত করলে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে জন্ম নেয় সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। অতীতের সামাজিক বিপ্লবের মত এক শ্রেণির শোষণের পরিবর্তে আরেক শ্রেণির শোষণ নয়, বরং রুশ বিপ্লব অবসান ঘটালো মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করার সমাজ ব্যবস্থা। শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্বাধীনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক বিনির্মাণের যাত্রাবিন্দু। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও বিনির্মাণ প্রক্রিয়া অগ্রসর হওয়ার মধ্যদিয়ে রাশিয়ায় শ্রেণি শোষণ-লুণ্ঠন, দারিদ্র-বেকারত্বসহ শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ৫টি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা পুরণ হয়। শ্রেণি শোষণের অবসানের মধ্যদিয়ে নিপীড়িত জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, নারী মুক্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতিসহ সাংস্কৃতিক বিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লিবিক পরিবর্তনসহ চিন্তা-চেতনার বৈপ্লবিক রূপান্তরে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে। রুশ বিপ্লব দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সামনে মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রথ প্রদর্শন করে। সভায় বক্তারা বলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের মধ্যে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া সবচেয়ে মন্দা ও সংকটে নিমজ্জিত হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। করোনা মহামারি, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। ফলশ্রুতিতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বিশ্ব বাজার পুনর্বণ্টন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল ও দৃশ্যমান রয়েছে। একদিকে প্রাধান্যকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য এবং বিপরীতে প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন-রাশিয়া। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় ইন্দো-প্যাসেফিক রণনীতিতে (ওচঝ) বাংলাদেশকে যুক্ত করতে মরিয়া। একই সাথে বাংলাদেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে চায় যা আবার চীন-ভারত উভয়ই স্ব-স্ব স্বার্থে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। মার্কিনের প্রতিপক্ষ চীন-রাশিয়া বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে চীনের রণনীতিগত বৈশ্বিক অবকাঠামো (ইজও) পরিকল্পনায় যুক্ত করে অগ্রসর হচ্ছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে এক জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ। বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির সাথে ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র-সরকার-সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির এ রকম জটিল পরিস্থিতিতে মহান রুশ বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে সকল দেশপ্রমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।