শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সদস্য পদ ফিরে পেলেন সাবেক সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩:২৭ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি::
ঐতিহ্যবাহী শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সদস্য পদ সসম্মানে ফিরে পেলেন ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এম ইদ্রিস আলী। গত ২৭ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরি কমিটির ‘জরুরি সভায়’ সদস্য পদ সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আফম আব্দুল হাই ডন ও সঞ্চালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন।
সভায় অ্যাজেন্ডা ছিল প্রেসক্লাবের কার্যকরি কমিটির (২০২৩-২০২৪) সিনিয়র সহসভাপতি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটনের পদত্যাগ গ্রহণ, ক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী অস্টেলিয়া গমন (কাউকে অবগত না করে) উপলক্ষে দায়িত্ব পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিনকে ভারমুক্তকরণ এবং বিবিধ অ্যাজেন্ডা।
বিবিধ অ্যাজেন্ডায় আলোচনায় অংশ নেন ক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক সৈয়দ সালাউদ্দিন এবং ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ এহসান বিন মুজাহির। প্রথমে সৈয়দ সালাউদ্দিন ক্লাবে অনুষ্ঠিত ২৫ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটনের সভাপতিত্ব ও সম্পাদকের ইয়াছিন আরাফাত রবিনের সঞ্চালনা বিষয়ে ক্লাবের গঠনতন্ত্র কি বলে এবং একই সাথে করোনাকালে ক্লাবে বিএনপি কর্তৃক পিপিই বিতরণ কেন্দ্র করে সাবেক সেক্রেটারি এম ইদ্রিস আলীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি কতটুকু সংবিধান সম্মত হয়েছে জানতে চান। যদি ইদ্রিস আলীর বিষয়টি সংবিধানের আলোকে হয়ে থাকে তাহলে বিএনপি নেতার মতবিনিময়ও একইভাবে হওয়া দরকার যোগ করেন তিনি। এসময় তার আলোচনার প্রেক্ষিতে এহসান বিন মুজাহির বলেন সংবিধানের কোন ধারায় ইদ্রিস আলীকে বহিষ্কার করা হয়েছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চান। আর যতি সংবিধান সম্মত না হয়ে শুধু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে অন্যায় এবং অসংবিধানিক, অগঠনতনান্ত্রিকভাবে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে তাহলে তিনি প্রস্তাব দেন আজকের সভায় ইদ্রিস আলীকে সসম্মানে সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি দিয়ে তাকে ইস্যু করে ক্লাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এসময় সংবিধান খোলে ভারপ্রাপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক বলেন এটি সংবিধানের কোনো ধারায় বলা নেই যে বিএনপির পিপিই বিতরণে বহিষ্কার করা যায়। তার প্রতি এটি অন্যায় ও অসযবিধানিকভাবে করা হয়েছে। পরে কোষাধ্যক্ষকের প্রস্তাব অধিকাংশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পাশ হয়। তার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
পরে গত ২৯ অক্টোবর প্রেসক্লাবের প্যাডে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আফম আব্দুল হাই ডন ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন স্বাক্ষরিত এক চিঠি এম ইদ্রিস আলীর ঠিকানায় ডাকযোগে প্রেরণ করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘২০২০ সালের ৮ জুলাই শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব বিশ্বজ্যোতি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় আপনাকে (এম ইদ্রিস আলী) প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ ও ক্লাবের সাধারণ সদস্য পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। যা ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের দলীয় অভিপ্রায় পূরণের স্বৈরাচারী মনোভাবে ক্লাবের রীতি নীতির বাইরে গিয়ে অগঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। এরআগে প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুম ভাড়া দেয়া এবং সেই কনফারেন্স রুমে করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে মাঠ পর্যায়ে সেবামূলক দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের পক্ষে পিপিই বিতরণ অনুষ্ঠানকে (অনুষ্ঠানের তারিখ ১১ জুন, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ২১ জুন শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা এম ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে তথাকথিত কতিপয় সাংবাদিক জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ও অবস্থান কর্মসূচি’ লেখা ব্যানারে প্রতিবাদ সভা ও অবস্থান কর্মসূচি ক্লাব চত্ত¡রে পালন করে। এরআগে বিক্ষোভ সহকারে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃবৃন্দ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে আপনিসহ আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ উত্থাপন করে নানা উত্তেজনামূলক স্লোগান দেয় ও সমাবেশ করে তাৎক্ষণিক বহিস্কারের জন্য দাবি তুলে এবং ক্লাবের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ সমাবেশে প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বিক্ষোভকারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচিতে সহমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন। যা ক্লাবের একজন নীতি নির্ধারকের কাছ থেকে কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি নৈতিকতা বর্হিভূতভাবে সমাবেশকারীদের পক্ষ নিয়ে সহকর্মীর প্রতি অন্যায় আচরণ করেন এবং ক্লাবের তৎকালীন কার্যনির্বাহী কমিটির কিছু সদস্যদের সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের ভয় দেখিয়ে ও চাপের মুখে আপনার বহিস্কারাদেশে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। সমাবেশে আপনি ছাড়াও আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীর নাম এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্থাপিত হলেও বাকিদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শুধুমাত্র আপনাকে দুরভিসন্ধীমূলকভাবে সরকার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্লাবের প্রাথমিক সদস্য পদসহ স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। এছাড়াও ২০২০ সালের ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় আপনার বিরুদ্ধে ক্লাবের আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিয়ম তদন্ত করে ক্লাব সভাপতি বরাবরে প্রতিবেদন প্রদানের ক্লাবের বর্তমান সিনিয়র সদস্য জনাব ইসমাইল মাহমুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইসমাইল মাহমুদ আপনার বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাননি বলে ক্লাবের পরবর্তী সভায় জানান।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি জনাব বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী ক্লাবের কার্যকরি কমিটির বা সাধারণ পরিষদের সভা আহবান না করে সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়া চলে যান। যাবার পূর্বে অফিসিয়্যালি কাউকে তিনি অবহিত করেননি। এরমধ্যে ক্লাবের সহসভাপতি-১ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটন দায়িত্ব চালান। এরপর তিনিও ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তার স্বীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ফলে ক্লাবের সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা ও গতিশীলতা রক্ষায় গত ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার রাত ৮টায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা ক্লাবের নির্বাচিত সহসভাপতি-২ আবুল ফজল মো. আব্দুল হাই ডন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২০ সালের ২১ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সন্ত্রাসী কায়দায় উশৃঙ্খল আচরণে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ক্লাব চত্ত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করে সময় বেঁধে দিয়ে ক্লাবে তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি প্রদান ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। আলোচনান্তে ও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব থেকে আপনার (জনাব এম. ইদ্রিস আলী) অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক বহিস্কারাদেশ তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে আপনাকে সসম্মানে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সদস্য পদে পূর্ণবহাল করা হলো।
বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছেন বলে মুঠোফোনে জানান এম ইদ্রিস আলী। তিনি সসম্মানে সদস্য পদ ফিরে পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করে প্রেসক্লাবের কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি করা ও দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান মহোদয়ের পক্ষ থেকে ক্লাবে পিপিই বিতরণ করার অপরাধে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ অগঠতান্ত্রিক, অসাংবিধানিকভাবে আমাকে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য পদ থেকে আজীনের জন্য বহিষ্কারেদশ করেছিলেন আওয়ামীলীগের দোসর সাংবাদিকরা। তবে আমাকে বর্তমান কমিটি সসম্মানে পদ ফিরিয়ে দিয়েছি, এর মাধ্যমে ন্যায়ের বিচার প্রতিষ্ঠা হলো।
প্রসঙ্গত, করোনাকালীন সময়ে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান’র পক্ষ থেকে পিপিই বিতরণের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছিল শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এম ইদ্রিস আলীকে। অবশেষে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। সম্প্রতি ক্লাবের এক জরুরি সভায় আলোচনান্তে ও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এম. ইদ্রিস আলীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বসম্মানে প্রেসক্লাবের সদস্যপদে পুণর্বহাল করা হয়। বিষয়টি ইদ্রিস আলীকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।