“ব্রিটিশ খেদাও, আজাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলমানরা”
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮:৩৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, এদেশ বার বার স্বাধীন হয়েছে। ব্রিটিশরা দুইশত বছর শোষণ করেছিল, ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল মুসলমানরা। সেই সময় ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের বীজ বপন করেছিল মুসলমানরা। সেই আজাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলমানরা। তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে একটি পর্যায়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলাম। মনে করেছিলাম বৈষম্য দূর হয়ে যাবে, কিন্তু হয়নি। সংখ্যাগুরু হিন্দুরা বৈষম্য শুরু করলো, মুসলমানদের অধিকার দেয়নি। এরপর একে স্বাধীনতা আসলো। কিন্তু তখনো স্বাধীনতা ফিরলো না। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারা বৈষম্যহীন সরকার ছিল না। তারা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। যারা যেই সময় ক্ষমতায় ছিল তারাই সুবিধা নিয়েছে, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তাদের বস্ত্রের কোন অভাব ছিল না, তাদের ঘরের অভাব ছিল না, আমেরিকা ও ইউরোপে তাদের কত ঘর আছে, তারা সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়েছে, আর আমাদের জনগণ না খেয়ে, কোন সুবিধা না পেয়ে ধুকে ধুকে মারা গেছে।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে এই ব্যবস্থায় ধনী আরও ধনী হবে, গরীব আরও গরীব হবে। যার টাকা আছে সে ব্যাংকে গেলে টাকা পায়, যার টাকা নেই সে পায় না। গরীবের মরগেজ লাগে। এভাবে চলতে থাকলে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত কোন গরীব ধনী হবে না। এই অর্থনীতি দিয়ে বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গরীব দারিদ্রসীমরা উপরে চলে যাবে।
প্রধান অতিথি বলেন, ১৪ লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ইসলাম থাকলে ১ লক্ষ টাকাও বাংলাদেশ থেকে পাচার হতে পারতো না। ১৪ লক্ষ কোটি টাকা যদি গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হতো, এই টাকা দিয়ে ইন্ড্রাষ্টি করা হতো, রিকশাওয়ালাদের রিকশা কিনে দেওয়া হতো, কৃষকদের দেওয়া হতো, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে বাংলাদেশে একটা গরীব থাকতো না।
ফয়জুল করীম বলেন, ১৫ বছর সরকার জনগণের জন্য আইন করে নাই, সকল আইন তাদের সুবিধার জন্য করেছে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য কোন আইন হয়নি, সরকারের নিরাপত্তার জন্য আইন হয়েছে। সকল বাহিনীকে সরকারের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই দেশে সরকারের পরিবর্তন হয়। তবে জনগনের কোন পরিবর্তন হয়না। আমরা জনগণের নিরাপত্তার জন্য আইন চাই, জনগণের মুক্তির আইন চাই, জনগণের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের আইন চাই। যাই হবে জনগণের জন্য হবে, কোন নেতার জন্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে একজন মন্ত্রীর ড্রাইভার দুইশত কোটির টাকার মালিক হয়ে যায়। ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়ে যায়। এইটা ভাবা যায়? ৫ আগস্টের পরে আমরা মনে করেছিলাম বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম আবারও দখলদারি, চাঁদাবাজি, চুরি, মাস্তানি শুরু হয়েছে। এগুলো চলতে থাকলে ৫ আগষ্টের স্বাধীনতা ব্যর্থ হবে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে ডাকাত, মাস্তান, চুর, দূর্নীতিবাজ, দখলদার যাতে ক্ষমতায় আসে না। তাদের সরাতে না পারলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তনের জন্য আসুন সকল বাংলা বাদ দিয়ে সবাই মিলে ইসলামের বাংলা গড়ে তুলি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা সুলাইমান আহমদের পরিচালনায় গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইউনুফ আহমাদ মানসুর।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা শাখাসহ প্রত্যেক উপজেলার শাখার নেতৃবৃন্দ। গণ সমাবেশে মৌলভীবাজার জেলা শাখার ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়।