“বন্যা সমস্যার সমাধানে জাতীয় স্বার্থে নদনদী, খাল-বিল খনন করতে হবে”
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ৫:৫৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনীসহ দেশের অন্তত ১১ টি জেলায় উজানের আকস্মিক ঢলে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত জনসাধারণকে রক্ষায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি।
২৩ আগষ্ট সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক সভা থেকে চলতি বছরে উপর্যুপরি বন্যায় আক্রান্ত মৌলভীবাজার জেলার জনগণের পাশে দাড়ানোর জন্য সংগঠনের নেতাকর্মী প্রতি আহবান জানানো হয়। জেলা এনডিএফ’র অন্যতম নেতা সোহেল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ জসিমউদ্দিন, শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন ভারত সরকার আন্তুর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে একতরফাভাবে গোমতী নদীর ডম্বুরী বাঁধ খোলে দিয়ে ফেনী জেলাসহ বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকা আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত করে জনসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারকে এব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ টি নদীর পানি বন্টন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিশ্চিত করতে হবে। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন নদীমাতৃক বাংলাদেশের জনসাধারণ বর্ষাকালে তাদের জীবনযাপনের উপযোগী নৌযানসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা নিজেরাই গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবিকা নিশ্চিত করেছে। বর্ষাকালে পাানি প্রবাহ ঠিক রেখে তাদের জীবনজীবিকা ও যোগাযোগের প্রেক্ষিতে নৌকা কেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলো জনসাধারণ। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও দালাল ক্ষমতাসীন প্রতিক্রিয়াশীল সরকারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান ও মানুষের উদ্ভাবনী শক্তিকে প্রয়োগ না করে সৃষ্ট বন্যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে চলেছে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে তাদের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবারাহ এবং শিল্পজাত দ্রব্যাদি নিজ দেশে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে, প্রকৃতি ধ্বংস করে এবং নদীর উপর ব্রীজ তৈরি করে গড়ে তোলে রেললাইন। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে নদী শাসনের বৈজ্ঞানিক নিয়মকে প্রয়োগ না করায় নদীগুলোর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় দেশ বিভাগের পর নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী পাকিস্তানে প্রভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রুগ মিশনের পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে তোলা ওয়াপদার বাঁধ-বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিকূলতা বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে। তারই ধারাবাহিকতায় নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, ঘরবাড়ী, ইটভাটা, ভূমিদস্যুদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা, কলকারখানা, অর্থনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে ফসলি জমিসহ নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা হয়। সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারত সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক নদী আইন ও পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক নিয়ম উপেক্ষা করে একতরফাভাবে ফারাক্কা বাঁধ, অভিন্ন ৫৪টি নদীর উপর ড্যাম, গ্রোয়েন ইত্যাদি নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রেখে কৃত্রিম মরুময়তা এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে অকাল বন্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কার্লভাট, ইটভাটা, ভূমিদস্যুদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা, কলকারখানা, অর্থনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে ফসলি জমিসহ নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী একচোটিয়া পুঁজিপতিরা এবং তাদের দালালদের মুনাফার নিচে বলি দেওয়া হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশকে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার ও আবহওয়ার পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাংলাদেশে। পুজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির বেপরোয়া লুন্ঠনের পরিণতি হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন ভাটি এলাকায় আজ বন্যা প্রায় নিয়মিত রূপ নিচ্ছে। তাকে যদি প্রতিক্রিয়াশীলদের মত বন্যা হিসাবে দেখি তাহলে আড়াল হবে বন্যার প্রকৃতি কারণ এবং এর জন্য যারা দায়ি তারা রক্ষা পাবে জনরোষ থেকে। আজ তাই প্রয়োজন বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির স্বার্থরক্ষাকারী স্বৈরতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে শ্রমিক-কৃষক জনগণের জীবনের নিশ্চয়তাসহ প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশকে উৎপাদন শক্তির বিকাশে পরিপূরক হিসাবে কাজে লাগানো। নেতৃবৃন্দ বন্যা দূর্গতদের পাশে সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের সাধ্য অনুযায়ী পাশে দাড়ানোর আহবান জানানোর পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ-প্রণোদনা প্রদানসহ বন্যা কবলিত মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসা ও নৌ-যোগাযোগের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।