নির্বাহী আদেশে কালই নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২৪, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
সরকারের নির্বাহী আদেশে আগামীকাল বুধবারের (৩১ জুলাই) মধ্যেই নিষিদ্ধ ঘোষণা হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর দেড়টার পরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে একমত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে গণভবনের প্রধান ফটকের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র, চোরাগোপ্তা হামলা করে দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে যে অপশক্তি, তাদের জাতীয় স্বার্থেই নির্মূল করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ছাত্রদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ও তাদের হয়রানি না করার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করতে জামায়াত-শিবির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করতে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবি করেন তিনি। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার বীভৎস বাস্তবতায় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা জরুরি। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে তারা আর সংবাদ সম্মেলন কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারবে না।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আজকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। জাতি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে বলে তিনি মনে করেন।
জানা গেছে, ১৪ দলের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য দেন। পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনু ও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে কথা বলেন। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত অন্যরা এতে সমর্থন জানান।
তবে বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এ সময় হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরাও একসময় আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে রাজনীতি করেছি। জনসমর্থন না থাকলে ও জনসমক্ষে আসতে না পারলে রাজনীতি করা যায় না বলেও মত দেন তিনি।
বৈঠকে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বক্তব্য দেন, সমালোচনা করেন। ছাত্রদের বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় বক্তব্যের সময় আরও সচেতন হওয়া দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করা হয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, এর পরও কেন আন্দোলন? এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের স্বার্থে এদের দমন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা চালুর ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে নির্মূল করতে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতা করা, মানুষের অর্থ-সম্পদ লুট, নারীদের ধর্ষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ নানাবিধ নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, যা এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে প্রমাণ হয়েছে। এসব অপরাধে দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন। এরপর ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করলেও ২০২৩ সালে ১৯ নভেম্বর তা সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়।