জৈন্তা রাজ্যে ফ্লোরিশিয়ানদের একদিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৫:৪২ অপরাহ্ণ
ওমর ফারুক নাঈম::
পাহাড় ছুঁয়েছে নিল আকাশ। সাদা মেঘ ঘুরে বেড়চ্ছে নীল আসমানে। সবুজ ঘাসের চাদরে বিছানো উপত্যকা। জৈন্তা রাজ্যের এমন অপরূপ রূপে একদিন ডুবে ছিল ফ্লোরিশিয়ানরা। পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়গুলো এ সময়ে সবুজে ভরে ওঠে। শনিবার তখন ঘড়ির ঠিক ৮টা বাজে, সাড়ি সাড়ি তোরোটি ফর্ড, মার্জিডিস, টেসলা, লেম্বোরগিনি, বুগাটি, রোলস রয়েস, ফেরারী, ভলভো, স্কানিয়া, জাগুয়া, রেঞ্জ রোভার, অডি দাঁড়িয়ে আছে মৌলভীবাজার পৌরসভার সামনে। নামগুলো শুনে হয়তো চমকে উঠার মতো। মৌলভীবাজারের ফ্লোরিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের পিকনিকের জন্য ১৩টি বাসের নামকরন করা হয়েছে এমন।
একে একে তেরোটি বাস যাত্রা শুরু করলো। কোনটাতে তরুণ যুবকরা আবার কোনটাতে তরুণীরা। প্রতিটি বাসের ভিতরের আনন্দ উৎসব ভিন্ন। কেউ কারো বন্ধু কিংবা সহপাঠি নন। তবুও যেন একই বন্ধনে আবন্ধ। বাস চলতে চলতে তখন পৌছে গেছে সিলেট তামাবিল সড়কে। সেখানে থেকে উঁকি দিচ্ছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিশাল বিশাল পাহাড়। তখন একেকটি বাসে বাজছে ভিন্ন ভিন্ন মন মাতানো গান। সেই সুরের ছন্দে ছন্দে তখন রোলস রয়েস নামের বাসটি গিয়ে থামলো জৈন্তা হিল রিসোর্টে। জাফলংয়ের পাঁচ কিলোমিটার আগে নলজুড়ি এলাকায় বিশাল টিলার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ি এ অবকাশ কেন্দ্র। পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ওখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভালোভাবেই। এছাড়া পাহাড়মুখী বেশ কয়েকটি কটেজও আছে এ অবকাশ কেন্দ্রে। জৈন্তা রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায় মেঘালয় পাহাড়ি ঝরনার সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যে মেতে উঠেন ফ্লোরিশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীরা।
কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত। আবার কেউ বন্ধ-বান্ধুবের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। কালো টি শার্টে ছিয়ে গেয়ে জৈন্তার রাজ্য। গ্রুপ ফটোসেশন শেষে সবাই সেরে নিলেন দুপুরের খাবার। এবার রওনা জাফলং।
খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইন। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এ নদী মিশেছে সুরমার সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিচ্ছেদ রচনাও করেছে এ নদী। সেখানে গড়ে উঠেছে জাফলং। জাফলংয়ের ওপারেই দেখা যায় ভারতের ডাউকি বন্দর। ডাউকি থেকে শিলং খুবই কাছে। মাত্র ৪০ কিলোমিটার। ডাউকি বন্দরের পাশেই রয়েছে উঁচু দুই পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ডাউকি ঝুলন্ত সেতু। পিয়াইন নদী স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসিয়ে দিলো কেউ। আবার কেউ মেতেছে পাহাড়ে দাড়িয়ে ডাউকি শহরের সাথে সেলফি নিতে।
পিকনিকে আসা রোলস রয়েসের তাহমিদ বলেন, অনেকদিন পর সবাই এক হতে পেরে ভাল লাগছে। আর জানি কি না এরকম আনন্দ করা যাবে। জৈন্তার সৌন্দর্য আর ফ্লোরিশিয়ানদের আনন্দ কখনো ভূলার নয়।
ফ্লোরিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জিল্লুল হক জেই বলেন, পিকনিকের ঘোষনা দেয়ার পরপরই অনেক উৎসাহ উদ্দিপনা দেখা যায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে। আমরা চিন্তাও করিনি পাঁচশোজন পিকনিকে অংশ নিবেন। অনেকদিন ধরে আমাদের এডিমিনরা কষ্ট করে ব্যবস্থাপনা করেছেন। আশাকরি শিক্ষার্থীদের আমরা একটি সুন্দরদিন উপহার দিতে পেরেছি। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যখন আমরা সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করতে পেরেছি।
লেখক: সহকারি সম্পাদক।