দুই দিন পাহাড়ে আত্মগোপনে ছিলো ১৭ ‘জঙ্গি’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছেন ১৭ ‘জঙ্গি’। তারা গত শনিবার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানের আগে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গিয়ে দুদিন পূর্ব টাট্টিউলির পাহাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি থেকে বিচ্ছিন্নভাবে তারা বের হন। এ সময় তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে আসেন।
আটকদের মধ্যে নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র মূলহোতা মাহমুদ ও পলাতক জঙ্গি চিকিৎসক সোহেল তানজিমও আছেন বলে জানা যাচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানের পর পাহাড়ের আস্তানা থেকে পালিয়ে যান তারা। আজ
স্থানীয় ইউপি সদস্য দরছ মিয়া বলেন, খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাকে কল করে জানায়, ১৫-১৬ জন অচেনা মানুষ তারা দেখতে পেয়েছেন। পরে তাদের বাজারে আটক করে লোকজন। তাদের জিজ্ঞাসবাদ করে সন্দেহজনক মনে হয়। তারপর সিএনজি চালকরা তাদের ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, এখানে আটককৃতদের মধ্যে ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান মাহমুদ আল মেন্দি ও পলাতক ডা. সোহেল তানজিম আছেন বলে ধারণা করছি। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে তারা শনিবার আটক জঙ্গিদের সহযোগী। মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি- ডা. সোহেল তানজিম ও ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান মাহমুদ এই জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজার থেকে স্থানীয় লোকজন জঙ্গি সন্দেহে তাদের আটক করে। বর্তমানে তাদের ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে রাখা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।
কর্মধা ইউনিয়নের কালেক্টর মাওলানা ছালিক আহমদ জানান, আটকরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদ কাফেলার প্রধানসহ ১৭ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে একজনের পায়ে সমস্যা রয়েছে। তিনি ইমাম মাহমুদ কাফেলার প্রধান।
কুলাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালেক বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
শেষ খবর পাওয়া (সন্ধ্যা ৭টা) পর্যন্ত সিটিটিসি) ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে।
এর আগে গত শনিবার (১২ আগস্ট) ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি, সোয়াট, জেলা পুলিশ ও কুলাউড়া থানা পুলিশ অভিযান চালায়। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।
এ সময় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই নব্য জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, কমব্যাট বুট এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার রাফিউল ইসলাম (২২), কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৭), সাতক্ষীরার শরিফুল ইসলাম (৪০), পাবনার আটঘরিয়া থানার আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সোহেল তানজিমের স্ত্রী মায়েশা ইসলাম (২০), বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে হাবিবা (২০)। এ ছাড়াও অভিযানে তিন শিশুকেও হেফাজতে নেয় সিটিটিসি।