শেয়ার কেলেংকারি: ফেঁসে যাচ্ছে বাংলা টিভির সামাদুল হক সহ অন্যরাও
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ জুলাই ২০২৩, ৪:৫৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
আলোচিত বাংলা টিভির শেয়ার কেলেংকারি ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন এমডি সৈয়দ সামাদুল হকসহ বর্তমান ব্যাবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, আর্থিক অনৈতিকতাসহ অন্যান্য অভিযোগে অতি সত্বর কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য অভিযুক্তদের দ্রুত সময়ের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রের দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য একটি অভ্যন্তরীণ চিঠিও ইস্যু করেছে দুদক। সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, শান্তি নগর শাখাকে ।
তথ্য যার স্মারক নং ০০.০১.০০০.৫০৫.০১.১৪০.২৩। এছাড়াও এনবিআরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলা টিভি লিমিটেড এবং সৈয়দ সামাদুল হক, পিতা: সৈয়দ রফিকুল হক, মাতা জুমেলা খাতুন, ঠিকানা: ৬০/২, তলাবাগ, সোবহানবাগ, ঢাকা। মীর নূর- উস-শামস, পিতা: মীর নুর উদ্দিন মাতার নাম শামসুর নাহার বেগম। কে এম রিফাতুজ্জামান, পিতা : কে এম আক্তারুজ্জামান। এমডি মনিরুল ইসলাম, এমডি মহিউদ্দিন বিশ্বাস। কে এম আক্তারুজ্জামান, পিতা: এবিএম আখিরউদ্দিন খান গংয়ের কাছ থেকে (ক) ব্যাংক হিসাব (খ) ঋণ হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং হিসাব বিবরণী (গ) সঞ্চয় পতির, ক্রেডিট কার্ড, ভিজিট রিপোর্ট, নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তিন কার্য দিবসের মধ্যে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৭ সালে সম্প্রচারে আসার আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল ‘বাংলা টিভি’ নিয়ে। দিন যত গড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কেলেঙ্কারি ততটাই বেড়েছে। এ নিয়ে দুদকে জমা পড়েছে একাধিক অভিযোগ।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে সামাদুল হককে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তলবও করেছিলো দুদক। ২৮ মে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি সাক্ষরিত চিঠিতে সামাদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৭ জুন তলব করা হয়। কিন্তু গরমে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে হাজির হননি অভিযুক্ত সামাদুল। কিন্তু বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি দুদক। বিষয়টি কঠোরভাবে তদন্তের জন্য ২০ জুন আরো একটি চিঠি জারি করে দুদক।
সেলিনা আখতার মনি সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনা-বেচার নামে বিপুল পরিমাণ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এতে বলা হয়, বহু অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে নিম্নেবর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘অতএব,জরুরী ভিত্তিতে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট নিম্নেবর্ণিত রেকর্ডপত্র/কাগজপত্র পত্র প্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মাঝে সরবরাহ করার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।’
কোটি টাকার বিনিময়ে শেয়ার হোল্ডারদের বাইরের লোককে চেয়ারম্যান করা, কর্মীদের বেতন-ভাতা না দেয়া, অংশীদারত্ব নিয়ে ইস্যু তৈরিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে বাংলা টিভি। আর এসবের পেছনে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর। তিনি বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ সামাদুল হক।
চ্যানেলের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়ে চুরতার আশ্রয় নেয়া, মানি লন্ডারিং এবং অন্যের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। কিছু বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মেলার পর সম্প্রতি তাকে তলব করে দুদক।
কিন্তু সামাদুল হক ‘গরমে অসুস্থ হওয়ার’ দোহাই দিয়ে দুদকে হাজির হননি। জানা গেছে, তিনি আইনজীবীর মারফতে সময়ের আবেদন করলেও কমিশন তা আমলে নেয়নি। রেওয়াজ অনুযায়ী কাউকে নোটিশ করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কেউ যদি এ নিয়ে চলছাতুরির আশ্রয় নেন, দুদক মামলা করে দেয়। দুদক মনে করে সামাদুল হকও চলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে সময় ক্ষেপনের পথ বেছে নেন। ফলে দুদক তার আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তাকে পুনরায় নোটিশ দেওয়া হতে পারে।নাও হতে পারে। সূত্রটি এমনটিই নিশ্চিত করেছেঅতিসম্প্রতি দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে বাংলা টিভির মালিকসহ শেয়ার হোল্ডারদের নাম প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, চ্যানেলটির বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী কে এম আখতারুজ্জামান, তার ছেলে কে এম রিফাতুজ্জামান (পরিচালক) ও বিটিভির সাবেক সংবাদ পাঠক মনিরুল ইসলাম (ভাইস চেয়ারম্যান)। তাদের কাছে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলা টিভির শেয়ার বিক্রি করেন সামাদ। টাকা নিয়ে মনিরুলকে শেয়ার বুঝিয়ে দিলেও আক্তার ফার্নিসারের মালিককে এখনো তার শেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেননি। এ কারণে ওই ব্যবসায়ী একাধিকবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছেন।
জানা গেছে,অভিযোগের পর বাংলা টিভির এমডি সামাদুল সহ বাকিদের তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি দুদকের পক্ষে এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হয়। দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাংলা টিভির শেয়ার হস্তান্তরের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক, চেয়ারম্যান কে এম আখতারুজ্জামান, পরিচালক মীর নুর উস শামস শান্তনু ও কে এম রিফাতুজ্জামানের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য তাদের ৭ জুন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
কিন্তু গত বুধবার (৭ জুন) তাদের কেউই দুদকের তলবে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। গরমে অসুস্থতার জন্য দুদকের কাছে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য না দিয়ে সময়ের আবেদন করেন সামাদুল হক।
তার পথ ধরেই পরিচালক রিফাতুজ্জামান, শান্তনু ও মনিরুল ইসলামও সময়ের আবেদন করেন। তাদের একজনের স্ত্রী, একজনের মা ও একজনের বাবা অসুস্থ- যে কারণে তারা দুদকে যেতে পারবেন না বলে জানান।
দুদকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলা টিভির পরিচালনা পরিষদে যারা আছেন, তারা একজোট এবং সিন্ডিকেট করে সময়ের আবেদন করেছেন তা স্পষ্ট।
মূলত, বাংলা টিভিকে তারা নিজেদের অবৈধ সম্পদ রক্ষার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সব কিছু বেরিয়ে আসবে ভেবেই তারা সময় নিয়ে টালবাহানা করছেন এটা তাদের একটা কুট কৌশল মাত্র। তবে দুদক এখন আইনানুগ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে সামাদুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।