চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ৫:৪৩ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন শ্রমিক ও খাত বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, চা শ্রমিকদের এই জীবনমান উন্নয়নের জন্য মোটা দাগে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, নিলামি ব্যবস্থার সংস্কার, চা-কে শিল্পের দৃষ্টিতে দেখা এবং বিনিয়োগ বাড়ানো।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম এবং বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের চা-বাগানের শ্রমিকরা কেন পেছনে পড়ে আছে?’ শীর্ষক সংলাপে তাঁরা এসব কথা বলেন।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এসডিজি বাংলাদেশের নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের এসডিজি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কাউকে পিছিয়ে না রাখা। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের চা শ্রমিকরা মূল ধারার জনগোষ্ঠী থেকে অনেকখানি পিছিয়ে। তাঁরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন আলোচনায় জায়গা পাচ্ছেন না। তাঁদের সমস্যা বহুমাত্রিক। দরিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার অভাব ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেশি। এসব জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তাঁদের পিছিয়ে রেখে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব না। ’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের চা-শিল্প উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবু চা-বাগানের কর্মীদের এখনো আর্থ-সামাজিক, মানবাধিকার এবং অন্যায্য মজুরিসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সমাধান করতে হবে। এই শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চা-বাগান শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের প্রধান খায়রুন আক্তার বলেন, ‘আমাদের থেকে রোহিঙ্গারা অনেক ভালো আছে। ৭০ বছর ধরে জঙ্গলে পাহাড় কেটে বসবাস করেও আমাদের আজ ভূমির ওপর কোনো অধিকার নেই। বর্তমানে আমাদের মজুরি ১৭০ টাকা। আমরা ৩০০ টাকার জন্য আন্দোলনে নেমেছিলাম। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা, তাতে ১৭০ টাকায় কিছুই হবে না। ১২০ টাকা মজুরিতে যে লাউ, ১৭০ টাকা মজুরিতে সেই কদু। ওই টাকায় আমাদের কিছুই হয় না। ’
খায়রুন আক্তার বলেন, ‘আমাদের মতো মানুষদের মানুষই মনে করা হয় না। মানুষ মনে করা হলে ৩০০ টাকা ধরে মজুরি দেওয়া হতো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন শিক্ষিত হচ্ছে। অথচ তারা কোথাও কোনো ভালো চাকরি পাচ্ছে না। মালিকপক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের নাকি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এই সুযোগ-সুবিধা কী সে বিষয়ে আমিও কিছু জানি না। তারা যে চিকিৎসা সুবিধার কথা বলে থাকে, সেখানে শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ ছাড়া আর কিছুই পাই না। ’
নারী চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, চা-বাগানে নারী শ্রমিক ৮০ শতাংশেরও বেশি। তাঁরা সারা দিন বাগানে কাজ করেন। অথচ বাগানে কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে সেখানে নারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া গর্ভকালীন ছুটিসহ অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলা রয়েছে।
সংলাপে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে চা শ্রমিকদের ৫২ শতাংশই দরিদ্র। এই বিশাল দরিদ্রগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আমরা (জাতিসংঘ) এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব। ’
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, ‘চা-বাগানের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। চা-বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার কথা এরই মধ্যে সরকারের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ’
সংলাপে সুপারিশমালা তুলে ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চা শ্রমিকদের উন্নয়ন হয়েছে শুধু অবকাঠামোগত দিক থেকে। কিন্তু তাঁদের মানসম্মত উন্নয়ন হয়নি, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে তাঁদের উন্নয়ন দরকার। এর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা খাতে কিভাবে তাঁদের আনা যায় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। ’