অভাবী শ্রমিকদের মুখে আশার আলো
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২২, ৯:১৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
দীর্ঘ প্রায় ১৮ দিন কাজে না থাকায় বাগানের শ্রমিকদের ঘরে বাসা বেঁধেছে অভাব। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন কেউ। এখন শ্রমিকদের নিয়ে আহারে ভরসা এনজিও ঝণ কিংবা দোকানের বাকি। এই অভাব আর ক্ষুধার জ্বালার মধ্যে একটু হলেও আশার আলো ফুটিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ঘোষণা।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) ১৮ তম দিনে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে ধর্মঘট চলছে। এদিকে আগামীকাল (শনিবার) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা বাগান মালিকদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
৩০০ টাকা মজুরী দাবীতে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগান সহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ১৮তম দিনেও শ্রমিকরা কাজে যোগ দিননি।
শুক্রবার দূপুরে জেলার ৯২টি বাগানে পাঞ্চায়েত কমিটি বৈঠকে বসবেন নিজ নিজ বাগানের নাচঘরে। ওই বৈঠকে মজুরী ও পরবর্তী শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেওরাছড়া চা বাগান পাঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সুবোদ কুর্মি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে সভা করবেন শনিবার বিকাল ৪টা থেকে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। সভা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
সাতগাও চা বাগানের শ্রমিক সুধাং বাউরি পূর্বদিককে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মজুরি পাচ্ছি না। ঘরে খাবার নেই কাচা চা পাতা এখন ভরসা। এনজিও থেকে ঝণ নিয়েছি। ঝণের বোঝা বাড়ছে।
সিত কুমার পূর্বদিককে বলেন, আজ আমরা আশার আলো দেখছি। আমাদের মা প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সাথে বৈঠকে বসেছেন। আমরা এখন তার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমরা ন্যাজ্য মজুরি নিয়ে কাজে নামতে চাই।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজি পাশী বলেন, চা জনগোষ্ঠী তাদের যৌক্তিক দাবিতে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সংগ্রামী চা শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। শ্রমিকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন, ফলে তাদের মজুরি এবং রেশন বন্ধ হয়ে আছে। এই রকম পরিস্থিতিতে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাকে মানবিক বিবেচনায় কিস্তি উত্তলন করা থেকে বিরত থাকা এবং কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম পূর্বদিককে বলেন, বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই ভরা মৌসুমেও দীর্ঘ সময় চা বাগান বন্ধ থাকায় বড় ধরণের সংকটে পড়েছে। এবছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি ১০০ মিলিয়ন কেজি। আমরা আশা করছি এই বছর এটি অর্জষ করতে পারবো। তবে এই সংকটের সমাধান না হলে কিন্তু উৎপাদনেও প্রভাব পরবে।
উল্লেখ্য, দেশের ১৬৭ চা বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। গত ৯ আগস্ট এ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে প্রথম কয়েকদিন কেবল চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। সে সময় মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সাতদিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে বৈঠক বা সমঝোতায় না আসায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। দফায় দফায় বৈঠক করেও এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক সমাধানে যায়নি এই সংকট। আগামীকাল বিকেলে বাগান মালিকদের নিয়ে বসবেন প্রধানমন্ত্রী।