বানের জলে ভেসে গেছে ঈদ আনন্দ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২২, ৩:৫৫ অপরাহ্ণ
ওমর ফারুক নাঈম::
চারদিকে থৈই থৈই পানি। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে ভানের জলে। প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র উঠা এসব মানুষের মনে নেই ঈদের কোন আমেজ। বরং সবসময়ই চোখে বাড়ি ফেরার তাড়না।
খুশির দিন পবিত্র ঈদুল আজহার দিন আজ। কেউ ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আবার কেউ গরম জলে আলু সেদ্ধ করতে ব্যাস্ত। বানের জলে ভেসে গেছে এখানকার প্রতিটি মানুষের ঈদে আনন্দও।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নেয় মনোয়ারা বেগম। ২৮ দিন ধরে এই আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তিনি। খাবারের পানির জন্য বোতল নিয়ে যাচ্ছেন পানি সংগ্ৰহের জন্য।
মনোয়ারা বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র জীবনেও ঈদ করিনি। জীবনের একটি দাগ হয়ে গেল। বাড়ি ঘর সব পানিতে। এখান থেকে গিয়েও কিভাবে বসবাস করবো সেই চিন্তা ই করছি। দুই এতিম নাতি আছে। তাদেরও পালতে হচ্ছে। এখন খুবই অসহায় অবস্থায় পড়েছি।
কথা হয় ছোট্টশিশু সানজিদার সঙ্গে। ঈদে কিছু কিনেছেন কি-না জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, আমরার ঈদের আনন্দ বন্যায় নিছেগি। বন্যায় আমরারে একেবারে শেষ করি দিছে। ঈদ কাপর কিনতাম পারছি না। আমরার ঘর-দুয়ার সবতা ভাঙি গেছে।
মনোয়ারা বেগম কিংবা শিশু সানজিদার মতো মৌলভীবাজারের তিনটি উপজেলার বন্যা কবলিত অধিকাংশ এলাকার মানুষদের যেন ঈদের আনন্দ স্পর্শ করতে পারেনি। বিশেষ করে ১২৯ টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মনে ঈদ উৎসবের কোনো আমেজ নেই। কারণ তাদের সব আনন্দ ভেসে গেছে বানের জলে।
জোছনা বেগম বলেন, ঈদের দিন মানুষ গোস্ত পোলাও রান্না করে। আমরা রান্না করেছি ডাল আর আলু। আমাদের কোন ঈদ নেই। আমরা গরিব। যেভাবে পারতেছি সেভাবে ঈদ করতেছি। বাচ্চা কাচ্চাদেও ঈদে কিছু কিনে দিতে পারি নাই।
হাকালুকি হাওর পাড়ের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের বাসিন্দা নেহারুন বেগম। বন্যায় তার ঘর-দুয়ার সব ভেঙে গেছে। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রায় এক মাস হতে চলেছে। বন্যার পানি না নামায় তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তাই তাকে এবার আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ করতে হচ্ছে।
একই আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন তাজুল ইসলাম। তিনি হাঁস-মুরগি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। বন্যায় হাট-বাজার তলিয়ে যাওয়ায় তিনি এখন বেকার। ঈদের দিন কীভাবে কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৪ দিন ধরে আছি আশ্রয় কেন্দ্রে। কাম-কাজ নাই। আশ্রয় কেন্দ্রে আইয়া সরকারি হুখনা (শুকনো) খাবার ও একদিন মন্ত্রী চাউল-ডাউল অতা দুইদিন পাইছি। আর কেউ আমরার খোঁজ নেয়নি। যদি সরকারিভাবে আমরার কেউও খোঁজ নিছে না। প্রমাণ দিতে পারলে আমরারে যে শাস্তি দিবা আমরা মানিয়া নিমু। আমরা অসহায় হওয়ায়ই আশ্রয়কেন্দ্রে আইছি। কোনো খরচ নাই ঘরে। হাতে টাকাও নাই। পুরান কাপড়, নিজের ঘর ছাড়া স্কুলে আছি। ঈদ কিলা কাটব ইতা আপনারাই বুঝইন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ গ্ৰামের তুহি বেগম বলেন, কাজ কর্মনেই অনেক দিন ধরে। এখন ঈদের সময় ছেলে মেয়েদের কিছু দিতেও পারি নাই। শুধু আফসোস করছি। অন্যান্য সময় হয়তো কষ্ট করেও কিছু দিতে পারতাম, এবার আর পারছি না।
কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে কথা হয় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, এবারের ঈদুল আযহায় তাদের কোনো আয়োজন নেই। অন্য বছরগুলোতে সাধ্যমতো তারা কেনাকাটা করেন। ঈদে সবাই মিলে আনন্দ করতেন। কিন্তু এবার তাদের মনে কোনো আনন্দ নেই।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুলাউড়া জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য তিনটি কুরবানী দেয়া হয়েছে। সকাল আশ্রয়কেন্দ্র রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া আরো অন্যান্য বরাদ্দ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে।