ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ মে ২০২২, ১:০২ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার। টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পা ফেলার ঠাই নেই। এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, ঈদের দিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে একলক্ষ পনেরো হাজার টাকার মতো ও বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রায় দের লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক, ছাত্র ছাত্রী ছিল তবে বিদেশী পর্যটক নাই বললেই চলে।
জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২শ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামন্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বুধবার (৫মে) দুপুরে মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমণ পিয়াসুদের। এদের মধ্যে সপরিবারে ও কাপলদের ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের দিন মঙ্গলবারের চেয়ে ও বুধবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও পর্যটকরা ছুটে এসেছেন জীব বৈচিত্র্যের অপরূপ সমাহার ঘুড়ে দেখতে।
কমলগঞ্জের মাধবপুর চা বাগান ও পদ্মছড়া নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দূর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। লেইকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
এছাড়া ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধসহ কমলগঞ্জের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। তবে, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাতে পর্যটকদের ভিড় কিছুটা কম ছিল। ভিড় কম থাকার কারণ হিসেবে জানা যায়,পানি কম তাছাড়া, হামহাম জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন। আর অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়। কিন্তু ঈদে বিভিন্ন ইভেন্টে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকরা আসছেন হামহাম জলপ্রপাত দেখতে। তাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশী।
ঘুরতে আসা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উম্মুল আরা সুইটি জানান, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনটি যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে।
লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা রাজশাহী থেকে চাকুরীজীবী মামুন আহমদ বলেন, খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। ঘুরতে এসে মনটা ভাল হয়ে গেল।
সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী ইসরাত জেরিন বলেন, এখানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। আব্বু আম্মুর সাথে ঘুরতে এসেছি। বানরের লাফালাফি দেখেছি। বড় একটা ব্যাঙের ছাতা দেখেছি (ব্যাঙের ছাতার আদলে তৈরি মানবছাতা)। এখানে এত গাছ, একসাথে এত গাছ এর আগে দেখিনি।তাছাড়া হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ যাদুঘড় ও লেকের পানি কি বলবো সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে। মন চাচ্ছে না যেতে। যেকোন ছুটি পেলে আবার আসবো।
লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। ঈদের দিন বৃষ্টি থাকলেও পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু ঈদের পরের ৭দিন পর্যন্ত পর্যটক বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, আমি সকাল থেকেই কমলগঞ্জের সকল পর্যটক এরিয়া আমাদের থানা পুলিশের একটি টীমকে নিয়ে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছি। কারণ ঈদ আসলেই পর্যটকের ঢল নামে কমলগঞ্জে তাই নিরবিঘেœ পর্যটকরা ঘুড়তে পারে সেইজন্য আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য পর্যবেক্ষন করছি। তিনি আরো বলেন, সকলের নিরাপত্তার জন্য কমলগঞ্জ থানা পুলিশ সবসময় সকলের পাশে আছে এবং থাকবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও আগত অত্যধিক পর্যটকের কারণে কিছুটা বিঘœ হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করার জন্য পায়ে হাঁটার তিনটি ট্রেইল পথ রয়েছে। দর্শনার্থীরা এই ট্রেইল ঘুরেই চলে যান। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে। পর্যটকদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, পর্যটন পুলিশ ও সিএমসি সদস্যদের নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রকৃতি ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।