logo
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • স্থানীয় সরকার
    • মৌলভীবাজার
    • সিলেট
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • ঝিঙেফুল
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • আরও
    • শিক্ষাঙ্গন
    • ইসলামী জিন্দেগী
    • অর্থ ও বাণিজ্য
    • স্বাস্থ্য-কথন
    • পত্রিকা
    • মুক্তমত
    • শিক্ষাঙ্গন
    • সাফল্য
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • মৌলভীবাজার
  • সিলেট
  • প্রবাস
  • সম্পাদকীয়
  • অর্থ ও বাণিজ্য
  • স্থানীয় সরকার
  • খেলাধুলা
  • ছড়া সমগ্র
  • ঝিঙেফুল
  • নারী ও শিশু
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • মুক্তমত
  • ইসলামী জিন্দেগী
  • শিক্ষাঙ্গন
  • সাফল্য
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • স্বাস্থ্য-কথন
  • পত্রিকা
  • ফটোগ্যালারী
  1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়

শেষ পর্ব
অসমাপ্ত আত্মজীবনী : সমীক্ষা ও সার-সংক্ষেপ ।। মো. সাইফুল ইসলাম


প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০২২, ৮:৪২ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর উপর নাতিদীর্ঘ পর্যালোচনা লিখেছেন মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) বাংলা বিভাগ, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ। এর আগে এই বই নিয়ে এমন বিস্তর পর্যালোচনা সম্ভবত বাংলাদেশে আর কেউই করেন নি। সাগর সেচে মুক্তা আহরণের মতো লেখক বইয়ের মূল সুর পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। অনেকের পক্ষেই হয়তো পুরো বইটি পড়া সম্ভব হয়নি অথবা পড়লেও অনেক কিছুই সেভাবে নাড়া দিতে পারেনি। উভয় শ্রেণীর পাঠকের জন্যই এই পর্যালোচনাটা পড়া জরুরি। শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা; তাঁর জীবন ও রাজনীতির বাক ও বিন্যাস সবকিছুই উঠে এসেছে লেখায়। তিন পর্বের ধারাবাহিক এ লেখার আজ তৃতীয় শেষ পর্ব প্রকাশ হলো। -সহযোগী সম্পাদক

শেষ পর্ব

প্রধামন্ত্রী হয়েই খাজা নাজিমুদ্দীন অবিবেচকের মতো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রহরায় চিকিৎসাধীন। সেখানেই গোপনে তাঁর সাথে দেখা করেন ছাত্রলীগকর্মী ও আওয়ামী লীগ কর্মী। বঙ্গবন্ধু তাঁদের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের দূরদর্শী পরামর্শ দেন এবং পরে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনেরও সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় ফরিদপুর জেলে পাঠানো হল, সাথে এবার মহিউদ্দিনও। প্রায় ২৬/২৭ মাস ধরে বঙ্গবন্ধু বিনা বিচারে বন্দি হয়ে আছেন। এর প্রতিবাদে অনশন ধর্মঘট শুরুর চিন্তা বঙ্গবন্ধু ঢাকা জেলে বসেই করেছিলেন। মহিউদ্দিনকে নিয়ে ফরিদপুর জেলে বসে তিনি শুরু করেন অনশন। দুজন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে চিঠি লিখেন, ভুলেননি স্বদেশের কথাও। তাই চিঠি লিখেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর কাছেও। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার মিছিলে পুলিশের গুলি নূরুল আমিন সরকারের অপরিণামদর্শিতারই পরিচায়ক। এর ফল যে সুদুরপ্রসারী হবে সেই চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।” ২৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তির পয়গাম পেলেন। দীর্ঘদিন করাবাসের পর বাড়ি ফিরলেন। কয়েক মাসের শিশুপুত্র কামালকে রেখে কারাবন্দি হয়েছিলেন। দুই বছরেরও অধিককাল পরে ফিরলেন। একজন রাজনৈতিক যোদ্ধার স্ত্রী সন্তানকেও যে কম বঞ্চনার শিকার হতে হয় না তা বঙ্গবন্ধুর জীবনের দিকে তাকালে সহজেই উপলব্ধ হয়। নিজের সন্তান বাবাকে না চেনা একজন বাবার জন্য যেমন পীড়াদায়ক, তেমনি ক্ষেত্র বিশেষে তা গৌরবেরও বটে।

শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হতেই বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় ফিরতে হল। দলের আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী তখন জেলে। দলের যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকলেন। সভায় তাঁকে অ্যাকটিং জেনারেল সেক্রেটারি করা হলো। সভাপতিত্ব করলেন সহ সভাপতি আতাউর রহমান। বঙ্গবন্ধু দলকে সংগঠিত করতে মনোযোগী হলেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বশীলতার সাথে অফিস সেক্রেটারির দায়িত্ব! পালনকারী মোহাম্মদ উল্লাহকে এ সময়ই নিয়োগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও করাচিতে আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়। রাজধানী করাচিতে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সাথে সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর কাছে আওয়ামী লীগের বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির ও গুলি করে ছাত্রহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের জোর দাবি জানান। গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে, বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র চলতে পারে না। জীবনে প্রথম বারের মতো রাজধানী করাচি দেখলেন। এর সাথে সবুজ শ্যামল প্রিয় মাতৃভূমির তুলনা করে এক অপূর্ব দার্শনিক বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু- “আমরা জন্মগ্রহণ করেছি সবুজের দেশে, যেদিকে তাকানো যায় সবুজের মেলা। মরুভূমির এই পাষাণ বালু আমাদের পছন্দ হবে কেন? প্রকৃতির সাথে মানুষের মনেরও একটা সম্বন্ধ আছে। বালুর দেশের মানুষের মনও বালুর মত উড়ে বেড়ায়। আর পলিমাটির বাংলার মানুষের মন ঐ রকমই নরম, ঐ রকমই সবুজ। প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্যে আমাদের জন্ম, সৌন্দর্যই আমরা ভালবাসি।”

বালুর দেশের মানুষের মনও বালুর
মত উড়ে বেড়ায়। আর পলিমাটির
বাংলার মানুষের মন ঐ রকমই
নরম, ঐ রকমই সবুজ।


হায়দ্রাবাদে (সিন্ধু) প্রিয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর সাথে দেখা করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের এফিলিয়েশনের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেন এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে বাংলার মানুষের মনে যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল তা দুজনের আলোচনায় উঠে আসে। সোহরাওয়ার্দীর সাথে করাচি ফিরে তাঁর কথা মতো সেখান থেকে আবার লাহোর রওয়ানা হন। ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য এক স্বতন্ত্র আবাসভূমি পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রখ্যাত কবি আল্লামা ইকবাল। তাঁর বাড়ি জাভেদ মঞ্জিলে থাকেন বঙ্গবন্ধু। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাঙালিদের দাবি ছিল উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা। এর মানে এই নয় যে, উর্দু রাষ্ট্রভাষা হতে পারবে না। কিন্তু পাকিস্তানে সেটাই প্রচার করা হয়েছিল। আবার আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান বিরোধী একটি দল বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের কর্মীরাই একসময় মুসলিম লীগের সাথে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু লাহোরে এক প্রেস কনফারেন্সে এসব বিষয় খোলাসা করে তুলে ধরেন। ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু জেলা ও মহকুমা আওয়ামী লীগ সংগঠনে তৎপর হন। সংসারের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাগিদ অনুভব করলেও হয়ে উঠতে পারেননি। পুরোটা সময় কেটেছে রাজনীতিক চিন্তা আর সংগ্রামে।

চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। সমগ্র পাকিস্তান থেকে আমন্ত্রিত ত্রিশ জনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যান পাঁচজন- আতাউর রহমান খান (রাজনীতিবিদ ও লেখক), তফাজ্জল হোসেন মানিক (সাংবাদিক), খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (লেখক ও গবেষক), ইবনে হাসান (উর্দু লেখক) ও বঙ্গবন্ধু।

পিকিং যাওয়ার পথে তাঁর দেখা রেঙ্গুন (বর্তমান নাম ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমারের একসময়কার রাজধানী) ও হংকং এর অল্প বিস্তর বর্ণনা দেন লেখক। বিশেষত কমিউনিস্ট ও কারেন বিদ্রোহ এবং গৃহযুদ্ধ কবলিত ব্রহ্মদেশের (বর্তমান মিয়ানমার) অরাজক অবস্থার কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। হংকং থেকে চীনে যান রেল গাড়িতে। ক্যান্টন প্রদেশকে তাঁর প্রিয় জন্মভূমির মতই সুজলা সুফলা বলে মনে হয়। ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর ছিল চীনের তৃতীয় স্বাধীনতা দিবস। ২ অক্টোবর থেকে তৎকালীন রাজধানী পিকিংয়ে শুরু হওয়া শান্তি সম্মেলনে ৩৭টি দেশের ৩৭৮ জন সদস্য যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু সেখানে বাংলায় বক্তৃতা করেন। ১১ দিনের সম্মেলন শেষ হলে বঙ্গবন্ধু পর্যটকের মতো চষে বেড়ান নানকিং, সাংহাই, হ্যাংচো শহর, তিয়েন শিং। গভীর পর্যবেক্ষণী দৃষ্টিতে তথ্য সহকারে তুলে ধরেন সেখানকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প ও জনাচার। দাড়ি কাটার জন্য দোকানে উপযুক্ত ব্লেড খোঁজে না পেয়ে বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতালব্ধ মন্তব্য, ‘চীন দেশে যে জিনিস তৈরি হয় না, তা লোকে ব্যবহার করবে না।’ সাংহাই শিল্প এলাকার এক টেক্সটাইল মিলের কলোনিতে যান। কৌতূহলবশত কায়দা করে ঢুকেন এক বাড়িতে। সেটা ছিল বিবাহিত এক শ্রমিক দম্পতির বাড়ি। বঙ্গবন্ধু স্বদেশীয় প্রথা ও সম্মান রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক কিছু না পেয়ে হাতের আংটি খুলে দোভাষীর মাধ্যমে ভদ্রমহিলাকে উপহার দেন। পরের দিন পাল্টা উপহার হিসেবে শ্রমিক মহিলা চীনের লিবারেশন পেন বঙ্গবন্ধুকে দেন। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেন চীন আমাদের পরে স্বাধীনতা পেয়েও শুধু জনগণকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর আমাদের দেশের জনগণ যে স্পিরিট নিয়ে পাকিস্তান করে ছিল সে উদ্দীপনাকে কাজে না লাগিয়ে বরং তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের আচরণ তাদেরকে দ্বিধা-বিভক্ত করেছে, অভিন্ন পাকিস্তানের জন্য কাজ করার স্পৃহা জাগাতে পারেনি। শান্তি সম্মেলনে যোগদান করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর চীন সফর নিয়ে আরেকটি পৃথক ভ্রমণকাহিনী লেখেন যা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে।

ঢাকায় ফিরে আবার দলীয় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিআন্দোলন ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় এলে তাঁকে নিয়ে জেলায় জেলায় ও বড় বড় মহকুমাতে সভা করেন। অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় শামসুল হক ১৯৫৩ সালে মুক্তি পান। বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে লিখেন, ‘১৯৪৩ সাল থেকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠানকে জমিদার, নবাবদের দালানের কোঠা থেকে বের করে জনগণের পর্ণকুটিরে যারা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে শামসুল হক সাহেব ছিলেন অন্যতম। একেই বলে কপাল, কারণ সেই পাকিস্তানের জেলেই শামসুল হক সাহেবকে পাগল হতে হল।’ মাওলানা ভাসানীসহ দলের নেতা কর্মীদের অনেকেই মুক্ত হন। আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল সভা ডাকা হলো। দলে কিছু স্বার্থবাদী ও সুবিধাবাদী ব্যক্তির উৎপাত যেন চিরন্তন। জেনারেল সেক্রেটারির পদ নিয়ে চেষ্টা তদবির শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় এক নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেল। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনকে বরখাস্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে তাঁর স্থলাভিসিক্ত করেন। অথচ মোহাম্মদ আলী বগুড়া না ছিলেন গণপরিষদের সদস্য, না ছিলেন মুসলিম লীগের সভ্য। নীতি ও আদর্শহীনতার যে রাজনীতি খাজা নাজিমুদ্দীন শুরু করেছিলেন, তাঁকেই এর শিকার হতে হল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস তাঁর ছিল না। বিস্ময়ের বিষয় ছিল, এমন অগণতান্ত্রিক চর্চার বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের কেউ প্রতিবাদও করেননি। তবে পূর্ব বাংলায় খাজা নাজিমুদ্দীনের জনপ্রিয়তা বহু আগেই শেষ হয়ে গেলেও এর প্রতিবাদ করেছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। শুধু খাজা নাজিমুদ্দীনের একনিষ্ঠ সমর্থক পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন নয়, মুসলিম লীগের অন্যান্য প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রীসহ একে একে সকলেই মোহাম্মদ আলী বগুড়ার আনুগত্য স্বীকার করে নিলেন।

জনগণ শুধু তাঁকে ভোটই দেয়নি, প্রায় ৫ হাজার
টাকাও দিয়েছিল নির্বাচনী খরচ চালাতে। জনগণের এমন
ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু অনুভব করেছিলেন মানুষকে ভালোবাসার প্রতিদান কত বিশাল হতে পারে।


১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু যেন এক অজানা অধ্যায়ের অবগুন্ঠন করলেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালেও ১৯৫৩ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা হিসাবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে আওয়ামী লীগে উপযুক্ত স্থান দিতে ও প্রাদেশিক আইনসভায় দলের নেতা বানাতে আওয়ামী লীগে কারও কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু মুসলিম লীগ থেকে বিতাড়িত কতিপয় স্বার্থবাদী ও সুযোগসন্ধানী লোক শেরে বাংলাকে পৃথক দল গঠন করতে প্ররোচিত করেন। তারা মূলত ফজলুল হকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার আস্বাদ নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তথাকথিত প্রগতিশীল একটি গ্রুপও পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগকে পরাজিত করতে বিরোধী দলীয় ঐক্য গড়ে তুলতে দাবি জানায়। যদিও আওয়ামী লীগ ছাড়া কার্যত কোন বিরোধী দল তখনও পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে উঠেনি। ‘গণতান্ত্রিক দল’ নামে একটি রাজনৈতিক দল থাকলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বেশিরভাগ সদস্যই যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিরোধিতা করার পেছনে যে কারণ দেখিয়েছেন তা বর্তমান সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারেÑ “যাদের সাথে নীতির মিল নাই, তাদের সাথে সাথে মিলে সাময়িকভাবে কোনো ফল পাওয়া যেতে পারে, তবে ভবিষ্যতে ঐক্য থাকতে পারে না। তাতে দেশের উপকার হওয়ার চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়ে থাকে।” মুসলিম লীগ থেকে বিতাড়িত কর্মীরা ( হামিদুল হক ও মোহন মিয়া) মূলত শেরে বাংলাকে দিয়ে রাতারাতি দল করিয়ে বিরোধী দলীয় জোটের নামে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। তারপর তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করবে। আবার যুক্তফ্রন্ট গঠন না করলে জনসাধারণের কাছেও এই ভুল বার্তা যেতে পারে যে, আওয়ামী লীগ ঐক্য চায় না। তাই এ নিয়ে দলের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী নিজে ঐক্যফ্রন্ট চাননি। কিন্তু দলের অনেক নেতাকর্মী (হাশিমউদ্দিন ও খোন্দকার মোশতাক আহমদ তাদের অন্যতম) যেভাবে ঐক্যফ্রন্টের জন্য মাতোয়ারা হয়েছেন তাতে অনোন্যপায় হয়ে দলের কাউন্সিল সভায়ই যোগ দিতে চাননি। দুঃখভরে রাজনীতি পর্যন্ত ছাড়তে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের কাজ শুরু করে। এদিকে ফজলুল হক গঠন করলেন কৃষক শ্রমিক দল। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতে আতাউর রহমান খান ও মানিক মিয়ার অনুরোধে মওলানা ভাসানী যুক্তফ্রন্টে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে ফজলুল হক দাবী করে নেজামে ইসলাম পার্টি নামে এরকটি দলকে যুক্তফ্রন্টে নেন। সোহরাওয়ার্দীকে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান করা হল। আওয়ামী লীগ থেকে আতাউর রহমান খান ও কৃষক শ্রমিক পার্টি থেকে কফিলুদ্দিন চৌধুরী হলেন জয়েন্ট সেক্রেটারি। একটি স্টিয়ারিং কমিটিও করা হয়েছিল। প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তিন পার্টি থেকে সম সংখ্যক সদস্য নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাস্ত করতে পূর্ব বাংলার বিরোধী দলগুলোর জোট ছিল যুক্তফ্রন্ট- এটাই যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা। কিন্তু এর ভেতরকার ভিন্নমুখী প্রবণতার কথা তুলে ধরলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মকথায়। গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া এ দুই থানা নিয়ে ছিল বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এলাকা। তাঁর প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী হিশেবে মুসলিম লীগ থেকে ওয়াহিদুজ্জামান মনোনয়ন পান। মুসলিম লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নানা তৎপরাতা চালায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভরসা ছিল তাঁর বিপুল জনসমর্থন। যার প্রতিফলন নির্বাচনে প্রায় ১০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বঙ্গবন্ধুর জয়। জনগণ শুধু তাঁকে ভোটও দেয়নি, প্রায় ৫ হাজার টাকাও দিয়েছিল নির্বাচনী খরচ চালাতে। জনগণের এমন ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু অনুভব করেছিলেন মানুষকে ভালোবাসার প্রতিদান কত বিশাল হতে পারে। জনমানসের প্রতি প্রবল আস্থাশীল বঙ্গবন্ধুর মন্তব্য, “যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।” আর নির্বাচনের ফলাফলে পূর্ব অনুমান মত সোহরাওয়ার্দীকেও আশ্চর্যান্বিত হতে হয়নি। কারণ মুসলিম লীগ ৯টির বেশি আসন পায়নি। মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় সম্পর্কে শুধু এতটুকুই জানাই যথেষ্ট যে, কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য মুসলিম লীগের এমন অনেকের জামানতের টাকাটা পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, ধরাশায়ী হয়েছিলেন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনও।

ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে যুক্তফ্রন্টের এমএলএ ((MLA-Member of Legislative Assembly) দের সভা ডাকা হল। এ সভায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সর্বসম্মতিক্রমে সংসদীয় নেতা হন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশ্বাস ছিল যে, শেরে বাংলা নিশ্চয় তাঁর ও ভাসানীর সাথে পরামর্শ করে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। কিন্তু মন্ত্রিসভা গঠনে শেরে বাংলার পরিকল্পনা তাঁদের হতাশ করে। যুক্তফ্রন্টে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া সত্বেও তাঁদের ছাড়াই যুক্তফ্রন্টের কয়েক জন মন্ত্রী শপথ নেন। এ নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল। যুক্তফ্রন্টকে কেন্দ্র করে সম্গ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যেভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছিল তাতে ভাঙ্গন ধরে। অবশেষে আওয়ামী লীগের পাঁচ জন এমএলএ নিয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা। এদিকে কেন্দ্রিয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া যুক্তফ্রন্ট সরকারের উৎখাত করতে কেবল সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। নবগঠিত মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার দিন থেকেই তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেল। কল-কারাখানার শ্রমিকদের গুটির চাল হিসেবে ব্যবহার করে কায়েমী স্বার্থ হাসিলের যে সস্তা কৌশল যুগ যুগ ধরে চলে আসছে প্রথমে সে পথেই হাঁটে মুসলিম লীগ সরকার। পরিকল্পিতভাবে আদমজী জুট মিলের বাঙালি শ্রমিক ও অবাঙালি স্টাফদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধিয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হল। শেখ মুজিবুর রহমান পেলেন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষি দফতর, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উঠলেন ঢাকার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। কয়েকদিনের মধ্যেই ফজলুল হকের সাথে করাচি যান। পূর্ব বাংলার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় কেন্দ্রিয় সরকারের সাথে। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়ার অভিযোগের সমুচিত জবাব দেন তিনি। বড়লাট (গভর্নর জেনারেল) গোলাম মোহাম্মদের এক প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর উত্তর সোহরাওয়ার্দির প্রতি তাঁর গভীর আস্থার সাক্ষ্য দেয়, ‘যদি শহীদ সাহেব কমিউনিস্ট হন, তাহলে আমিও কমিউনিস্ট। আর যদি তিনি অন্য কিছু হন তবে আমিও তাই।’ দেশে ফিরতে না ফিরতেই তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হল, যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় জারি হল গভর্নরের শাসন। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের যারা বাইরে ছিলেন তাঁদের প্রতিবাদহীনতা বঙ্গবন্ধুকে পীড়িত করে। এদিকে পাকিস্তানে তখন মুসলিম লীগ নেতাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া গণপরিষদে এক আইন পাস করে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা খর্ব করেন। এর জবাবে গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ২৩ অক্টোবর পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করে গণপরিষদ ভেঙে দেন। যে গণপরিষদ ইচ্ছা করেই ভারতভাগের ৭ বছরেও কোন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেনি। অথচ ভারত ১৯৫২ সালের মধ্যেই শাসনতন্ত্র রচনা করে দেশজুড়ে সাধারণ নির্বাচন দেয়। মুসলিম লীগের নেতাদের মধ্যে চলে শুধু ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ। নতুন রাষ্ট্র হিশেবে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির বদলে কেবল একটি ব্লকের (যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী ব্লক) দিকে ঝুঁকে পড়াকেও সমর্থন করতে পারেন নি বঙ্গবন্ধু।

মোহাম্মদ আলী বগুড়া গোলাম মোহাম্মদের কাছে নতজানু হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চিকিৎসার জন্য জুরিখ। আওয়ামী লীগের সভাপতি বিলেতে, জেনারেল সেক্রেটারি কারাবন্দি। এ সময় পাকিস্তানের বড়লাট গোলাম মোহাম্মদের ঢাকায় আসার খবর পাওয়া যায়। তাঁকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজনে ব্যথিত হন বঙ্গবন্ধু। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করা হবে এ খবরে খুশি হতে পারেননি শিল্পপতি ও আমলারা। কারণ তাঁকে দিয়ে তাদের সুবিধামাফিক কাজ করানো সম্ভব হবে না। ফজলুল হক পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দীকে সমর্থন না করে সমর্থন করেন মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে। সুস্থ হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী করাচি আসলে তাঁকে জনসাধারণ বিরাট অভ্যর্থনা জানায়। বঙ্গবন্ধু বলেন, একমাত্র জিন্নাহ ছাড়া পাকিস্তানে এত বড় অভ্যর্থনা আর কেউ পায়নি। গভর্নর গোলাম মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীকে বুঝান যে, পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় বর্তমানে কেউই প্রধানমন্ত্রী নয়। এটি একটি কেয়ারটেকার সরকার। তাঁকে (সোহরাওয়ার্দীকে) প্রধানমন্ত্রী করা হবে। তবে তার আগে তাঁকে আইনমন্ত্রী হয়ে একটি শাসনতন্ত্র রচনা করতে হবে।
বেগম ফজিলাতুন্নেছার চিঠিতে বাবার গুরুতর অসুস্থতার খবর পান বঙ্গবন্ধু। সরকারের কাছে স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা আইনে দশ মাস জেলে থাকার পর ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু। বাড়ি থেকে শহীদ সাহেবের খবরে আবার ঢাকা পৌঁছান। সেখান থেকে করাচি রওয়ানা হন। সোহরাওয়ার্দীর আইনমন্ত্রী হওয়ার খবরে বঙ্গবন্ধু যৌক্তিক কিছু কারণে তাঁর প্রতি নাখোস হন। সোহরাওয়ার্দীর কাছে জানতে পারেন যে, গভর্নর গোলাম মোহাম্মদ তাঁকে বলেছেন তিনি (সোহরাওয়ার্দী) মন্ত্রিসভায় না আসলে সামরিক বাহিনীকে শাসনভার অর্পণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু এতে গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেন।

যুক্তফ্রন্টের সকলে সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আর ফজলুল হককে পূর্ব বাংলার নেতা হিসেবে গণ্য করার কথা ছিল। কিন্তু কৃষক প্রজা পার্টি ও নেজামে ইসলামের নেতারা মোহাম্মদ আলী বগুড়াকে পাকিস্তানের নেতা হিসেবে সমর্থন করে। এতে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্টের সভায় ফজলুল হকের নেতৃত্বে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুঁশিয়ারি দেন। করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে আতাউর রহমান, আবুল মনসুর আহমদ ও মানিক মিয়াকে নিয়ে বৈঠক করেন। সকলে একমত হয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকেন। বঙ্গবন্ধু ও আতাউর রহমান দলের সকল এমএলএর স্বাক্ষর নেন। হক সাহেবকে সভা ডেকে অনাস্থা প্রস্তাব মোকাবেলা করতে জানানো হল। তিনিও তাতে রাজি হলেন। ঠিক করা হল, বঙ্গবন্ধু অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন আর আবদুল গণি বার এট ল তা সমর্থন করবেন। যুক্তফ্রন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের ১১৩ জন সদস্যের দস্তখতই এর জন্য যথেষ্ট ছিল।

মাঝেমধ্যে কিছু কথা হাস্যরস (Humour))) সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে-
আমি ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, বেশি জোরে চালাবেন না,
কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।

আত্মজীবনীটি বঙ্গবন্ধু শেষ করতে পারেননি। ৩৫ বছরের জীবনের ঘটনাগুলো নিয়েই তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পরিসমাপ্তি ঘটে। পুরোটা লেখতে পারলে হয়তো তাঁর সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জানা সম্ভব হত। কারাবন্দি জীবনে শুধু স্মৃতির উপর নির্ভর করে লেখা আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গক্রমে নির্ভুলভাবে বহু ব্যক্তির নাম ও পরিচয় উল্লেখ করেছেন। যা তাঁর প্রখর স্মৃতিশক্তির পরিচয় বহন করে। রাজনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ এ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর অনবদ্য রচনাশৈলীরও ছাপ রয়েছে। তাঁর জীবনেরই অংশ হিশেবে সরল প্রাঞ্জল ভাষায় ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর নির্মোহ বর্ণনা পাঠককে মোহিত না করে পারে না। আবার সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর মনোজাগতিক প্রতিক্রিয়ার মনোজ্ঞ বিশ্লেষণে পাঠক একটি সময়কে সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। রাজনীতির কবি (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’ ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল প্রকাশিত এক নিউজে বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি বলে আখ্যায়িত করে) যেন তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনেরই এক শিল্পভাষ্য নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ব্যক্তিচিন্তার বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় বইটি ঋদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ঠ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তাঁর ‘বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে বলেন, ‘এখানে একদিকে ব্যক্তি হিসেবে শেখ মুজিবের চিন্তার মগ্নতা গভীরভাবে রূপায়িত হয়েছে, নিজের রাজনৈতিক জীবন তখনকার সময়ের পটভূমিতে চমৎকারভাবে তিনি উঠিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি চোখ রেখেছেন জগতের নানা দিকে। খুঁটিনাটি নানা বৃত্তান্ত এবং নিজের অনুভবের সারাৎসারে তাঁর প্রতিটি বই হয়ে উঠেছে অনন্য।’ মাঝেমধ্যে কিছু কথা হাস্যরস (Humour)) সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে- ‘আমি ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।’ মূলত ছোট ছোট বাক্যে সহজ সাবলীল গদ্য তাঁর লেখনীকে বিশিষ্টতা দান করেছে। উদাহরণ হিশেবে এ বইয়ের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করা যায়- ‘বিরাট লেক, সকল পাড়েই শহর গড়ে উঠেছে আজকাল। একপাশে মোগল আমলের কীর্তি পড়ে আছে। এখানে এসে বাদশা ও বেগমরা বিশ্রাম করতেন। বাদশা শাহজাহানের কীর্তিই সকলের চেয়ে বেশি। বাদশা ও বেগম যেখানে থাকতেন সে জায়গাটা আজও আছে। সাদা মর্মর পাথরের দ্বারা তৈরি। আমরা সমস্ত সন্ধ্যা সেখানেই কাটালাম। সন্ধ্যার পর আস্তে আস্তে শহরের দিকে রওয়ানা করলাম। পানির দেশের মানুষ আমরা, পানিকে বড় ভালবাসি।’

মূলত তাঁর আত্মজীবনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিশেবেই উঠে এসেছে সমকালীন রাজনীতি। সেই সাথে পর্যবেক্ষণী দৃষ্টিতে এর জটিল গতিধারার বিশ্লেষণে ফুটে উঠেছে তাঁর চিন্তা-দর্শনের স্বরূপ। আর এর শিল্প-সুষমাময় দিক আমাদের জানান দেয় বঙ্গবন্ধুর লেখনী প্রতিভার।

লেখক : মো. সাইফুল ইসলাম : প্রভাষক (বাংলা), শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ।

জাতীয় এর আরও খবর
এবার চালের রপ্তানির লাগাম টানতে যাচ্ছে ভারত, বিপর্যয়ের শঙ্কা

এবার চালের রপ্তানির লাগাম টানতে যাচ্ছে ভারত, বিপর্যয়ের শঙ্কা

বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের জন্য ২৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান মনোনীত

বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের জন্য ২৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান মনোনীত

প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই

প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই

চাঁদ দেখা যায়নি, সৌদিতে ঈদ সোমবার

চাঁদ দেখা যায়নি, সৌদিতে ঈদ সোমবার

যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের সাবেক এমপির মৃত্যুদণ্ড

যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের সাবেক এমপির মৃত্যুদণ্ড

সর্বশেষ সংবাদ
<span style='color:red;font-size:16px;'>প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা রমরমা </span>	 <br/> মৌলভীবাজার হাসপাতালে এক্স-রে ও এমআরআই অচল, ভোগান্তিতে রোগীরা
প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা রমরমা
মৌলভীবাজার হাসপাতালে এক্স-রে ও এমআরআই অচল, ভোগান্তিতে রোগীরা
কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার
কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার
উন্নত ভবিষ্যতের খোঁজে শিক্ষিত তরুনরা পাড়ি জমাতে চায় হাজার মাইল দুরের দেশে
উন্নত ভবিষ্যতের খোঁজে শিক্ষিত তরুনরা পাড়ি জমাতে চায় হাজার মাইল দুরের দেশে
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা শামছুল ইসলাম
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা শামছুল ইসলাম
আগামী ৫-৮ জুন ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইন 
আগামী ৫-৮ জুন ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইন 
গিয়াসনগর ইউনিয়নের ৯৫ লাখ টাকার বাজেট দিলেন চেয়ারম্যান টিটু 
গিয়াসনগর ইউনিয়নের ৯৫ লাখ টাকার বাজেট দিলেন চেয়ারম্যান টিটু 
এবার চালের রপ্তানির লাগাম টানতে যাচ্ছে ভারত, বিপর্যয়ের শঙ্কা
এবার চালের রপ্তানির লাগাম টানতে যাচ্ছে ভারত, বিপর্যয়ের শঙ্কা
কুলাউড়া সীমান্ত থেকে ৪ ভারতীয় নারী-শিশু আটক
কুলাউড়া সীমান্ত থেকে ৪ ভারতীয় নারী-শিশু আটক
খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার হুমকির’ প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে বিএনপির সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার হুমকির’ প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে বিএনপির সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
মদ খেয়ে মাতলামি, যুবলীগ নেতা কারাগারে
মদ খেয়ে মাতলামি, যুবলীগ নেতা কারাগারে
আটা ময়দার পাইকারি বাজারে অনিয়মের দায়ে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা
আটা ময়দার পাইকারি বাজারে অনিয়মের দায়ে ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা
শ্রীমঙ্গলে জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
শ্রীমঙ্গলে জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
দুই দিনে শিশুসহ তিন লাশ উদ্ধার
দুই দিনে শিশুসহ তিন লাশ উদ্ধার
মৌলভীবাজার ঘুরে দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার
মৌলভীবাজার ঘুরে দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার
মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত
মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত
শ্রীমঙ্গলে আলোয় আলো প্রকল্পের প্রাক-শৈশব বিকাশ কেন্দ্র ও ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন
শ্রীমঙ্গলে আলোয় আলো প্রকল্পের প্রাক-শৈশব বিকাশ কেন্দ্র ও ডে-কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন
রাজনগরে জনশুমারি বিষয়ক অবহিতকরণ সভা
রাজনগরে জনশুমারি বিষয়ক অবহিতকরণ সভা
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির পাশে পুণ্যভূমি স্মৃতি পরিষদ
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির পাশে পুণ্যভূমি স্মৃতি পরিষদ
রাজনগরের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্টান প্রধান হলেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রহিম খাঁন
রাজনগরের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্টান প্রধান হলেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রহিম খাঁন
মৌলভীবাজারের শ্রেষ্ঠ স্কুল দি ফ্লাওয়ার্স, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রোকসানা আক্তার
মৌলভীবাজারের শ্রেষ্ঠ স্কুল দি ফ্লাওয়ার্স, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রোকসানা আক্তার

© 2019 purbodeek.com

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: আলহাজ্ব মো: চন্দন মিয়া, সম্পাদক : মুজাহিদ আহমদ,
প্রকাশক : আলহাজ্ব হাফিজ সাব্বির আহমদ, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি : মাও. কামরুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মুহাম্মদ আজির উদ্দিন পাশা, সহযোগী সম্পাদক : সালাহ উদ্দিন ইবনে শিহাব,
সহকারি সম্পাদক: আখতার হোসাইন জাহেদ, মো. রেদওয়ানুল ইসলাম

সম্পাদকীয় কার্যালয়: এম এ রহিম মার্কেট, এম সাইফুর রহমান রোড, মৌলভীবাজার-৩২০০।
ফোন : ০১৭১২ ৭১৬ ২৪৪, ০১৭১৯ ৮৪১ ৮৬৪, ০১৭২৯-৪৩৩৪৬১, ০১৭১০ ৩৮৩৯৫৬,
ই-মেইল: salahuddinpurbodik@gmail.com, purbodik11@gmail.com, purbodik12@gmail.com

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh

Go to top