ডিসি অফিসের নিয়োজ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিককে ‘কুলি’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ মার্চ ২০২২, ৩:৫৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিনিধি::
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব প্রশাসনের ৪টি গ্রেডে সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিককে ‘কুলি’ বলায় প্রতিবাদে জানিয়েছেন চা শ্রমিকদের সন্তানেরা। শুক্রবার ২২ জনকে নিয়োগের জন্য এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে ৭ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অদিশাখা-১ (মাঠ প্রশাসন) নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
শনিবার (৫ মার্চ) সকালে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে মানবববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন চা শ্রমিকরা। সচেতন চা শ্রমিক ছাত্র ও যুবকবৃন্দ এই ব্যানারে তারা প্রতিবাদ জানান।
পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী এক চা শ্রমিক সন্তান বলেন, পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি প্রশ্নপত্রে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে বলা হয়েছে, শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানী বলা হয়। শ্রীমঙ্গলে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের চা খুব উপাদেয়। কুলিরা হাত দিয়ে চা পাতা সংগ্রহ করে। প্রক্রিয়াজাত চা পাতা থেকে চা উৎপন্ন হয়।
প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিকদের কুলি বলায় মন খারাপ হয়েছে উল্লেখ্য করে বলেন, সরকার নিজে এবার আমাদের কুলি বললো। এ ছাড়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চা বাগানের সংখ্যা ৯২টি। অথচ স্ট্যাটিসটিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্টির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪২টি চা বাগান রয়েছে।
সার্টিফিকেট সহকারী পদের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, চা বাগানে কাজের অভাব। অনেক কষ্ট করে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরির চা শ্রমিক বাবা-মা পড়ালেখা করিয়েছেন। বড় কষ্টে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এই অভাবের গেড়াকলে। ভালো মন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্নপত্র দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
চা শ্রমিকের সন্তান আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নত্রে এমন শব্দের ব্যবহার দেখে চোখে জল চলে আসলো। ৪৫ মিনিট চুপ করে বসেছিলাম। কিন্তু মা-বাবার অভাবের চেহারাটা বার বার চোখে ভেসে আসে। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র। আমাদের আর কত অবহেলা সইতে হবে জানি না।
ক্রেডিট চেকিং কাম সায়রাত সহকারী পদের আরেক পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রে এ ধরনের শব্দ ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমি চাই প্রশ্ন প্রণয়নকারী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিচার হোক।’ তার ভাষ্য, ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চা বাগান এই স্বাধীন বাংলার শিল্পের চাকাকে সচল রেখেছে। আর এই শিল্পে কাজ করছে লক্ষাধিক শ্রমিক। শ্রমিকরা শ্রমিক হয়, সে যেই শিল্পেরই হোক। কিন্তু তাদের কুলি বলার অধিকার কারও নেই।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নে আপত্তির শব্দ ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান। একটি নিয়োগ পরীক্ষায় ভুল তথ্য তারপর একটি পরিশ্রমী জাতিগোষ্ঠীকে হেয় করে কিভাবে কুলি আখ্যায়িত করা হয়েছে তা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জবাব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারি শ্রম আইনে চা বাগামের কর্মীদের চা শ্রমিক সম্বোধন করা হয়েছে। আর শ্রম আইনের পরিপন্থী শব্দ কিভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হলো ? এর সুস্পষ্ট জবাব দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তিনি। অন্যতায় চা শিল্পাঞ্চলে আন্দোলন শুরু হবে।
মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মেহেদী হাসান বলেন, এখনো প্রশ্নপত্র দেখিনি। শুধু পরীক্ষার্থীদের অ্যাকোমোডেশনের ব্যবস্থা করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিনে নির্বাচন বোর্ড এই পরীক্ষা নিয়েছে।
এবিষয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, এব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ৪ মার্চ ২০২২ তারিখ মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের অধীন নিয়োগ পরীক্ষায় “চা শ্রমিক” বোঝাতে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করায় সৃষ্ট অসন্তোষ বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কাউকে ছোট করা বা আঘাত করার জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড দুঃখ প্রকাশ করছে। সকলের অনুভূতি ও ভাবাবেগের প্রতি বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল। ভবিষ্যতে এধরনের ভুল এড়ানোর জন্য সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।