কাউয়াদীঘি হাওর শুকিয়ে চৌচির
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৬:৩১ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে কাউয়াদীঘি হাওর। এই হাওরের মানুষের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ধান। কিন্তু হাওরাঞ্চলে সেচসুবিধা না থাকায় প্রায় দেড় হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। কৃষকদের দাবী হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা লাছ নদীদে সুইচ গেট নির্মাণ করা হলে সেচ কাজে সুবিধা হবে।
সরেজমিনে কাউয়াদিঘি হাওরের গোয়ালিকারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে সময়টাতে হাওর থাকার কথা ছিল ফসলে ভরপুর সেটা সময়ে হাওর শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। আমন ধান কেটে নেওয়ার পর উজানের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খড় পড়ে আছে। অন্যদিকে হাওরের দিকে চলে যাওয়া একটি কাঁচা সড়কের দুই পাশজুড়ে যত দূর চোখ যায়, খালি জমি। ভাটির দিকে জমির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লাছ নদী। এ নদী হচ্ছে হাওরের প্রাণ। কয়েকজন সেচপাম্প লাগিয়ে নালা তৈরি করে জমিতে খালের পানি নিচ্ছেন। কেউ প্লাস্টিকের ২০০-৩০০ ফুট দীর্ঘ পাইপ লাগিয়ে পানি নিচ্ছেন জমিতে। এতে তাঁদের অনেক বাড়তি খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া স্থাপিত একটি অস্থায়ী অগভীর নলকূপ দেখা গেছে। বর্ষার আগে সেটি তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। বাকি জমিগুলো পতিত পড়ে আছে।
এলাকার কৃষকেরা বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরের গোয়ালিকারা এলাকাতে একটি সুইচ গেট নির্মাণ করা হলে তাঁরা হাওরের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রায় এক দশক ধরে তাঁরা এ দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
আখাইলকুড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের অনল ঘোষ বলেন, একটি সুইচ গেট দিলে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পেতাম। পানি না থাকায় এই হাওরের কেউ ফসল ফলাতে পারেন না। সবাই নিরোপায় হয়ে বসে আছেন। ফসল ফলানোর কোন আশাই করছেন না। অনেক বছর ধরে জমিগুলো পতিত পরে আছে। বোরো হচ্ছে না আমনও হচ্ছে না। কোন কৃষি ফসল হচ্ছে না।
কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, এই রাস্তার ডান ও বামে অনেক জমি পানির অভাবে চাষাবাদ হচ্চে না। হাওরে যে অল্প কৃষি হয়, সেগুলোর জন্য কৃষকরা অনেক খরচ করে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করেন। ডিজেলের দাম এখন অনেক বেড়েছে। মেশিনের অভাবে অনেক কৃষক সেচ দিতে পারেন না। একটা সুইচ গেট হলে এতো সমস্যায় পড়তে হতো না।
আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা হাওর অঞ্চলের মানুষ। কৃষি হচ্ছে আমাদের প্রধান আয়ের উৎস। এরমধ্যে বোরো হচ্ছে প্রধান। একটা সুইচ গেটের অভাবে আমাদের হাজার হাজার একর জমি আজ পতিত। যাই আমার কিছু চাষাবাদ করি কিন্তু পানির অভাবে ফসল নষ্ঠ হয়ে যায়। লাছ নদী থেকে অনেক খরচ করে কিছু পানি সেচ দিয়ে আনলে, তাতেও কাজ হয় না। ডিজেলের যে দাম বৃদ্ধি হয়ে এক একর জমিতে সেচ বাবদই খরচ হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দেখা যায় চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যায় না।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইটা ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ও একাটুনা ইউনিয়নে পড়েছে এসব অনাবাদি জমি। এই জমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। এলাকার কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে গোয়ালিকারা এলাকাতে একটি সুইচ গেট নির্মাণের মাধ্যমে সেচসুবিধা সৃষ্টির দাবি করে আসছেন। ২০১২ সাল থেকে সংস্থার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি পাউবো প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। গোয়ালিকারায় একটি জলকপাট হলে হাওরে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হবে।
ইটা ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থার সহ সভাপতি রাজন আহমদ বলেন, লাছ নদীতে একটা সুইচ গেট নির্মাণের জন্য দশ বছর ধরে কৃষকরা দাবী জানাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে সুইচ গেট হলে কৃষকদের আর সেচ করতে হবে না। স্বাভাবিক ভাবেই হাওরে পানি থাকবে। প্রায় দেড় হাজার একর অনাবাদি জমি কৃষির আওতায় আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজী লৎফুল বারী বলেন, এটি এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এ এলাকায় সেচব্যবস্থা চালু করা হলে অনেক অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। তবে জলকপাটটি কোন জায়গায় করলে সবার উপকার হবে, এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে পাউবোকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পুরো এলাকাটিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করে হেড কোয়ার্টারে প্রকল্প পাঠিয়েছি। আশা করি শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।