জরুরী সমস্যা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান এনডিএফের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:৫২ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভা থেকে চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত দেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের জরুরী সমস্যা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়। ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ(কোর্ট রোড) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা এনডিএফ’র সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক। সভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের উপর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। সরকার এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাস ও লঞ্চের ভাড়া শতকরা প্রায় ২৭-৩৫% বৃদ্ধি করেছে। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে নেমে আসার সময় দেশে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় গত সাত বছরে বিপিসি ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে। সেই টাকা ভর্তুকি দিলে জ্বালানি তেল ও পরিবহণ ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ত না। এমনকি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সময় সরকার বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে জানিয়েছিলে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও দাম কমানো হবে। কিন্তু গত ৬ সপ্তাহ যাবত ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে ৮৫ ডলার থেকে ৬৬ ডলারে নেমে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি। সরকার দায়হীনভাবে অটোগ্যাস, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি করেছে, আগামীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুত, পানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা। অথচ সরকার একদিকে উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছে আবার একই সাথে জীবন জীবিকার সকল প্রয়োজনীয় বিষয়কে রাষ্ট্রীয়, দলীয় ও ব্যবসায়ীদের অবাধ লুটপাট ও লাগামহীন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিণত করে চলেছে। এরকম পরিস্থিতি জনজীবনের জরুরী সমস্যা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প নেই। জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহাবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রে ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা নারায়ন গোড়াইত, হবিগঞ্জ জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান সোহেল, জেলা এনডিএফ’র কোষাধ্যক্ষ মোঃ শাহিন মিয়া, সদস্য সোহেল আহমেদ সুবেল প্রমূখ। সভায় বক্তারা আরও বলেন আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, সিল্ক রোড, স্ট্রীং অব পার্লস, বিসিম ইকোনিমক করিরোড, এআইআইবি ব্যাংক ইত্যাদি পদক্ষেপের বিপরীতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইন্দো-প্যাসিফিক রণনীতিকে নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক ভারতকে কাউন্টার ব্যালেন্স হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে লুক ইস্ট পলিসিকে সমন্বিত করে কোয়াড প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারতের সাথে লেমোয়া চুক্তি, কমকোসা চুক্তির ধারাবাহিকতায় বেকা চুক্তি সম্পাদন করে তার আগ্রাসী ইন্দোপ্যাসিফিক রণনীতিকে অগ্রসর করে চলেছে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে অকাস জোট গঠন করে অত্যাধুনিক সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ইন্দোপ্যাসিফিক রণনীতিতে বাংলাদেশকে যুক্ত করার লক্ষ্যে চলছে নানামূখী তৎরপরতা। মার্কিনের প্রতিপক্ষ পুঁজিবাদী চীনও বাংলাদেশকে স্বীয়পক্ষভূক্ত করার লক্ষ্যে চীনের বাজারে বাংলাদেশী শতকরা ৯৭ ভাগ পণ্যের(৮,২৫৬ টি) শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা প্রদান, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেনে উন্নিত করা, পায়রা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজম্যান্ট এন্ড রেস্টোরেশন’ নামের এই প্রকল্পের প্রস্তাব, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বিক্রিসহ নানামূখী অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামরিক তথা সামগ্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। তার প্রতিফলন ঘটছে মার্কিনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না জানানো এবং ব্যাবের ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রদানের মধ্য দিয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির এ রকম জটিল পরিস্থিতিতে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তুলতে হবে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতিকে অগ্রসর করার প্রত্যয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি’২০২২ সংগঠনের ৩য় জেলা সম্মেলন সফল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।