বড়লেখায় চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ৪:৫৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি::
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ১০ ইউপির মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৫ জন বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
এতে বিপাকে পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের প্রার্থীরা। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এরই মধ্যে ১৫ জনকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন বলে দলের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ হবে। উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। এরমধ্যে উপজেলার ৮ ইউপিতে আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতা বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। চারটি ইউপিতে দুজন করে ৮ জন, তিনটিতে একজন করে ৩ জন এবং একটিতে ৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এই ১৫ বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
বর্ণি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জোবায়ের হোসেন (নৌকা)। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম আহমদ (ঘোড়া) ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য আব্দুল মুহিত (মোটরসাইকেল)। দাসেরবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জিয়াউর রহমান (নৌকা)। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন (ঘোড়া) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার চক্রবর্তী (আনারস)। উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রফিক উদ্দিন আহমদ (নৌকা)। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আতাউর রহমান (আনারস) ও মো. মুমিনুর রহমান টনি (ঘোড়া)। দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নাহিদ আহমদ বাবলু (নৌকা)। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শাহাব উদ্দিন (ঘোড়া)। বড়লেখা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ছালেহ আহমদ জুয়েল (নৌকা)। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজ উদ্দিন (ঘোড়া)। তালিমপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস (নৌকা)। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এখলাছুর রহমান (আনারস) ও সদস্য সুনাম উদ্দিন (ঘোড়া)। দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন (নৌকা)। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম (ঢোল), উপজেলা যুবলীগের সদস্য আব্দুল জলিল ফুলু (ঘোড়া), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মানিক (রজনীগন্ধা) ও ইউনিয়ন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন (মোটরসাইকেল)। দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সুলতানা কোহিনুর সারোয়ারী (নৌকা)। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজির উদ্দিন (ঘোড়া)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক বলেন, কয়েকটি ইউপিতে অযোগ্যদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যারা ত্যাগী নেতা তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে দলের অনেক কর্মীরা-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। কেউ দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। তবে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কারণ বিদ্রোহী প্রার্থীরা না হলে হলে তখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন। এতে সহজেই নৌকার জয়ের পথটা সহজ হত।
দলের মনোনীত কয়েকজন প্রার্থী বলেন, দল তাদের মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে তারা সমস্যায় রয়েছেন। আবার উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারা ব্রিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। যার কারণে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়েছে পড়েছেন। তবে যারা মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তারা আমাদের পক্ষে কাজ করছেন। তারা দলের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি তাদের মদদতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী বলেন, দলের দুর্দিনে কাজ করেছি। কিন্তু দল আমাদের মূল্যায়ন করেনি। এজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর শুক্রবার বিকেলে বলেন, যারা দলের প্রার্থীদের বিদ্রোহী হয়েছেন, তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দলের যেসকল নেতাকর্মীরা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছেন, তাদের সবার নাম সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।