তারা ‘ক্ষমতা’র নমিনেশন চান!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ৫:৩৯ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। দীর্ঘ পাঁচবছর পর আবারও দোয়ারে কড়া নাড়ছে ইউপি নির্বাচন। তাই এই নির্বাচনে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী করতে দলীয় নমিনেশন চান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪৬জন। বলা যায় অনেকটা ক্ষমতার নমিনেশন চান তারা।
চলতি বছরের আগামী ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন। এরই মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক নৌকার মাঝি হতে স্ব স্ব প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। লক্ষ্য একটাই,তা হলো যেকোন মুল্যে নৌকা পেতে হবে। সে লক্ষে নৌকার মাঝি হতে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর সাথে সাথে লবিং করে যাচ্ছেন নিয়মিত। নৌকা পেতে অনেকে সোস্যাল মিডিয়াকে প্রচার প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেও নেতাদের দৃষ্টি কাড়ার প্রতিযোগিতায় তৎপরতা চালাতে দেখা যায় অনেককে। সদরের ১২টি ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউনিয়নেই নৌকার মনোনয়ন চাচ্ছেন চার থেকে পাঁচজন করে প্রার্থী। জয়-পরাজয় যাই হোকনা কেন, শেষ পর্যন্ত যাচাই বাছাই শেষে যেকোন একজনের ভাগ্যেই জোটবে নৌকার মনোনয়ন। সেক্ষেত্রে ওইসব ইউনিয়নে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যশীদের মধ্যে নৌকার চুরান্ত মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন চাচ্ছেন পাঁচজন করে প্রার্থী। আবার কোন ইউনিয়নে রয়েছেন এক বা একাধিক প্রার্থী। ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রুমেল আহমেদ। ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নে আওয়মীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট পাঁচজন হলেন, সুইডেন প্রবাসী ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুহিত টুটুল, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিলা মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছুরুক মিয়া (লন্ডনী) বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সামছুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গোলাম মোস্তফা’র ছেলে যুবলীগ নেতা গোলাম মোশাররফ টিটু।
১০ নং নাজিরাবাদ ইউনিয়নে দুইজন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন, সৈয়দ মুহিত আলী ও মোঃ আশিকুর রহমান। ৯নং আমতৈল ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দু’জন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন, জেলা যুবলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট সুজিত দাশ ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মখলিছুর রহমান। ৭নং চাঁদনীঘাট ইউপিতে মোট চার প্রার্থীর সবাই নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আব্দুল আহাদ সজিব, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আক্তার উদ্দিন, যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদ ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আকলাই মিয়ার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা আছলম মিয়া। ৬নং একাটুনা ইউপিতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই প্রার্থী হলেন,বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি আওয়ামীলীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। ৫নং আখাইলকুড়া ইউনিয়নে মোট দু’জন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোয়ন প্রত্যাশী। এরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ ও আওয়ামীলীগ নেতা এমদাদুল হক রেণু।
৮নং কনকপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশি হলেন, জুবায়ের আহমদ ও যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামার শিপু। খলিপুর ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনজন হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অরবিন্দু পোদ্দার বাচ্চু, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আশরাফ আলী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমদ আলী। ৪নং আপারকাগাবালা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন দুই প্রার্থী। তারা হলেন, মুজিবুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন। ২নং মনুমুখ ইউনিয়নে পাঁচজন প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশি। এরা হলেন, আশিক মিয়া, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি দিলদার মিয়া,লন্ডন প্রবাসী লেছু মিয়া,সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা হোসেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ সৈকত ও এমদাদ আহমদ জুনু। ৩নং কামালপুর ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন, হাজী আলাউর রহমান , লন্ডন প্রবাসী সুহেল আহমদ, এডভোকেট মুজিবুর রহমান বাচ্চু ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আপ্পান আলীর নাম শুনা যাচ্ছে।
এদিকে দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ৪০জনের নাম নানা সূত্রে জানা গেলেও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার (ভিপি) সুয়েব জানিয়েছেন এসব ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেতে সর্বমোট ৪৬জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে যাচাই বাছাই করে আমরা তালিকা চুরান্ত করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে আগামী ১৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সভা শেষে সেখানেই চুরান্ত হবে ১২ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন প্রাপ্তদের চুরান্ত নাম।
সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার (ভিপি) সুয়েব জানান, প্রার্থীতা ঘোষনার পরও যারা প্রত্যাহার করবেন না তাদের দলীয় পদ পদবী বাতিল হয়ে যাবে। কোন অবস্থাতেই বিদ্রোহীদের ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে যারা দলের জন্য পরিক্ষিত ও ত্যাগী এবং তৃণমূলে যাদের রয়েছে জনপ্রিয়তা।
উল্লেখ্য. ২৩ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে মৌলভীবাজার ও রাজনগর ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। চতুর্থ ধাপে আগামী ২৩ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগের ৮০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই ৮০টির মধ্যে মাত্র একটি ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর।