শেরপুরে চলন্ত বাসে শাবি শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ৮:২৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় এক যুবককে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার স্বজনশ্রী গ্রামের মো. আব্দুর রউফের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান (২৬)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তিনি সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া পরিবহনের (চট্ট মেট্রো ব-১১-১০৮৬) নম্বর বাসে করে সিলেটে আসছিলেন। বাসটির বি-৪ সিটে বসা ছিলেন যাত্রী মাহবুবুর রহমান। তার পেছনের ই-৪ সিটে বসা ছিলেন ওই ছাত্রী। সামনের সিটে বসা মাহবুবুর এক পর্যায়ে তার সিটের স্প্রিং সুইচ টেনে পেছনে হেলিয়ে দেন। পরে তিনি তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি ভিডিও প্লে করে ওই ছাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ দেখান এবং ছাত্রীর দিকে বারবার তাকিয়ে বিভিন্নভাবে অশোভন অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করেন। ওই তরুণী এর প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে ওই ছাত্রীকে সিট বদলে আরেকজন নারীর পাশের আসনে বসানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৭টায় মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছামাত্র মাহবুবুর রহমান গাড়ি থেকে নামতে চাইলে ওই ছাত্রী বাধা দেন। তিনি যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাকে গাড়িতে রাখার জন্য অন্যান্য যাত্রীদের সহায়তা চান। এসময় গাড়ির ভেতরে যাত্রীদের হট্টগোল শুরু হয়। তাদের হট্টগোল শুনে মহাসড়কে রাতে টহলের দায়িত্বরত শেরপুর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মো. শিবলু মিয়া সেখানে যান। তিনি বাসের যাত্রী ও হয়রানির শিকার ছাত্রীর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি শোনেন।
পরে তিনি বিষয়টি শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেনকে জানান। ওসি সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহকে বিষয়টি জানান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেন ওসি।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি নবীর হোসেন বলেন, হাইওয়ে পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বিস্তারিত ঘটনা শোনেন এবং ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যুবককে কারাদণ্ড দেন এবং জরিমানা করেন।
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রীর কারণে ওই বখাটে যুবককে আটক করে সাজা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দণ্ড ঘোষণার পর অভিযুক্তকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরেজমিনে এসে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২/৮এর (৪) ধারা মোতাবেক ৩ (তিন) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড, অনাদায়ে বিনাশ্রমে ০১ (এক) মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ঐ আসামীকে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।