‘অবিলম্বে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য ও গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করুন’
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ নভেম্বর ২০২১, ৬:০৩ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের উপর জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ধারায় গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি জনজীবনকে আরো দুর্বিসহ করে তুলবে মন্তব্য করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট(এনডিএফ) মৌলভীবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
০৯ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে এমনিতেই জনজীবন দিশেহারা। তার ওপর সরকার জ্বালানী তেল ও এলপি গ্যাসের দাম অন্যায্যভাবে বৃদ্ধির ধারায় সরকার সড়ক ও নৌপথে গণপরিবহন ভাড়া যথাক্রমে ২৭% ও ৩৫% বৃদ্ধি করেছে। অথচ আগের দিনই জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়ে ছিলেন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতি ১০ কিলোমিটারে যাত্রী প্রতি পরিবহণ ব্যয় বাড়বে ৯৩ পয়সা, পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে যা ১৮ পয়সা। কিন্তু মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকার প্রতি কিলোমিটারে যাত্রী প্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ৩৮ পয়সা, যা জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাব থেকে ৪ গুণের বেশি। আর সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ ডিজেল চালিত গাড়ির বিপরীতে মালিকরা সিএনজি গ্যাসে চালিত গাড়ির ভাড়াও বৃদ্ধি করেছে। বলা বাহুল্য পরিবহণ মালিকদের বড় অংশই সরকারি দলের নেতা, মন্ত্রী ও এমপি।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরে ১৪ দফায় পানি, ৭ দফায় গ্যাস, ১০ দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ, একাধিকবার জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যাপক জনগণের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুত, পানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা দ্রব্যমূল্যের উপর্যুপরি বৃদ্ধির ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে জনগণের প্রাত্যহিক জীবনে। গণপরিবহন ভাড়া ও জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বহুমুখী। জ্বালানি তেলের ১৬ শতাংশ ব্যবহার হয় কৃষিতে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। এখনো দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৩২ শতাংশ জ্বালানি তেল নির্ভর। আবার কেরোসিন ও এলপিজির মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রাম-শহরে রান্নায় জ্বালানি খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে অটোগ্যাসে মূল্যবৃদ্ধিও ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি ছোট গণপরিবহনের জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেবে। বলা চলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত সব শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর আরো পীড়নমূলক হবে। বলা হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় ও বিপিসির লোকসান কমানোর জন্যই বাড়ানো হয়েছে। অথচ গত সাত বছরে বিপিস প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। দাম বাড়ানোর পরিবর্তে বরং বিপিসির মুনাফা মানুষের দুঃসময়ে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার উচিৎ। এতে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় আরেকটু স্বস্তি ফিরবে। একই সঙ্গে ভারত ও অন্য দেশের মতো শুল্কও কমানো যেতে পারে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি পণ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ শুল্ক ও কর বিদ্যমান। এটা কিছুটা কমানো হলে তা ভোক্তাসাধারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হবে। সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধির সাফল্য প্রচার করছে। কিন্তু সম্প্রতি পিপিআরসি-বিআইজিডি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, করোনাকালে দেশে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। দারিদ্র্যের হার এখন প্রায় ৪২ শতাংশের মতো, যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকারই করা হচ্ছে না। এটা অস্বীকৃতির একটি অপসংস্কৃতি। এবারের বাজেটেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। আর জ্বালানির দাম ও গণপরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই অস্বীকৃতির সংস্কৃতি কাজ করেছে যা সরকারের গণবিরোধী স্বৈরাচারী চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন শ্রেণি বিভক্ত বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রে যে শ্রেণির সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সেই শ্রেণিরই স্বার্থ রক্ষা করে। বাংলাদেশ একটি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক দেশ। এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এ যাবত অধিষ্টিত সকল সরকারই হচ্ছে সামন্ত আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার। তাই আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার কখনোই জনগণের কথা ভাববে না এটাই স্বাভাবিক। তাই এধরনের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান। প্রেস রিলিজ।