ডাক্তার এম. এ. করিমের মৃত্যুতে মৌলভীবাজার এনডিএফ’র শোক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ নভেম্বর ২০২১, ৬:২৭ অপরাহ্ণ
এদেশের সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আপসহীন অকুতোভয় দৃঢ়চেতা সাহসী জননেতা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক সেবার সম্পাদক ডাক্তার এম. এ. করিম ৪ নভেম্বর দুপুর ২ টা ২৫ মিনিটে সময়ে ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস একযুক্ত বিবৃতিতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন ডাক্তার এম এ করিম এক জীবন্ত ইতিহাসের অগ্রসেনা ও ইতিহাসের কালপঞ্জী। প্রায় ৮ দশক জুড়ে রয়েছে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সুদূর প্রসারী কর্মতৎপরতা ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৯৮৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন ডাঃ এম. এ. করিম। আর সাধারণ সম্পাদক হন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা প্রতাপ উদ্দীন আহম্মেদ। যা ছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা। যার অন্যতম নায়ক হলেন ডাক্তার এম. এ. করিম। সুতরাং ডাক্তার এম. এ. করিম এদেশের জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ইতিহাসে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে অক্ষয় হয়ে থাকবেন।
বিশ্বপরিসরে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিতর্কেও তিনি সব সময় সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সা¤্রাজ্যবাদী-স্বার্থরক্ষাকারী-সুবিধাবাদী ক্রশ্চেভ সংশোধনবাদ, তিন বিশ্ব তত্ত্ব ও মাওসেতু চিন্তাধারাসহ সকল প্রকার সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও দৃঢ়। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে অনেকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হলেও আদর্শ ও রাজনৈতিক প্রশ্নে তিনি সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবী বিকল্পধারা প্রতিষ্ঠায় তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করতে এতটুকু দ্বিধা করেন নি। এখানেই ছিলেন ডাঃ করিম অনন্য ব্যতিক্রম।
গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় ডাঃ এম.এ করিম অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি আজীবন অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গিয়েছেন। শ্রমিক দিনমজুর নিম্নবৃত্তদের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। তাছাড়া প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীসহ অন্যান্য রাজনীতিকদেরও তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছেন।
তিনি মওলানা ভাসানীরও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন তাই তিনি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি হিসেবে বুঝতেন সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজি তথা সকল প্রকার শোষণ-শাসনমুক্ত স্বাস্থ্য ও সমাজ ব্যবস্থাকে। আর তাই চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর হাত ধরেই গণতন্ত্রের নির্ভিক মূখপত্র ‘সাপ্তাহিক সেবা’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি সাপ্তাহিক সেবা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
নেতৃবৃন্দ কৃতজ্ঞ চিত্তে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের মৌলভীবাজার জেলা শাখার ২য় সম্মেলনে জননেতা ডাক্তার এম এ করিমের বৃদ্ধ বয়সে উপস্থিত হয়ে সম্মেলন উদ্ধোধন করে নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করার কথা স্মরণ করেন। পাশাপাশি বৃহত্তর সিলেটের টিপাইমূখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলন, সিলেট কোর্ট পয়েন্টে চা-শ্রমিক সমাবেশ, সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্র বিরোধী আন্দোলনে বৃদ্ধ বয়সেও উপস্থিত হয়ে নেতৃত্ব প্রদান করে নতুন প্রজন্মের সামনে অনুপ্রেরণা ও নতুন আশার সৃস্টি করেন। তাঁর লেখা ‘নানান রঙের দিনগুলি: ঢাকা সেন্ট্রাল জেল’ ও ‘কাসিমবাজার কুটি থেকে আগরতলা’ দুইটি বই প্রকাশ হয়েছে। এছাড়াও তিনি ‘কমরেড আবদুল হক রচনাবলী’ নামক গ্রন্থের সম্পাদনা করেন।
ডাক্তার এম এ করিমের দেখিয়ে দেওয়া পথে এদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ উচ্ছেদ করে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব তাঁর উত্তরসরীদের। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব।