এক বাড়িতে হাজার হাজার কাকের বসবাস
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ নভেম্বর ২০২১, ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
চারদিকে কাকের কা-কা শব্দ। সবত্র কাকের অবাধ বিচরণ। বাঁশ ঝাড় গাছের ডাল কিংবা বাড়ির চালে কাক। যে দিকে চোখ যাবে কাক আর কাক। তাই এলাকার লোকজন নাম দিয়েছেন কাকের বাড়ি। শহর থেকে দূরে হওয়ায় অনেকটা অড়ালেই রয়েছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মেদেনিমহল গ্রামের বাড়িটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকালের সূর্যটা যখন আভা ছড়িয়ে ডুব দেয় পশ্চিম আকাশে। তখনই ঝাকে ঝাকে কাক ফিরতে থাকে। একে একে গাছে গাছে বসে পড়ে কাকরা। শত শত, হাজার হাজার কাক। গাছ, বাঁশঝাড় আর মাটিতে। কা-কা শব্দে ভরে উঠে পুরো এলাকা। আকাশে যখন কাক ওড়ে তখন আকাশ কাকে আর কাকে ছেয়ে যায়। এতে খুশি এলাকার লোকজনও।
কথিত আছে যে, দীর্ঘ চল্লিশ বছর আগে এই বাড়িতে বসবাস করতে একজন ইমাম। কিন্তু একটি বিরোধের জেরে ইমামকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে ইমামের বাড়িতে বাসা বেঁধেছে কাক পাখি।
গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের গ্রামের একটি বাড়িতে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কাকা পাখি বসবাস করে। অনেক পাখি দেখে আমার এলাকার মানুষ আনন্দিত। এলাকার মানুষ বাড়ির নামটি দিয়েছে কাকের বাড়ি। একটি সিজনে এখানে অনেক পাখি আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ এগুলো সংরক্ষণ করার।
এলাকার যুবক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, আমাদের মেদিনিমহল গ্রামের মৌলভীচক এলাকার কয়েকটি বাড়িতে দীর্ঘদিন কাকা বসবাস করে। কাক কোন দিন কোন ধরণের ক্ষতি করেনি। আমরাও দেখে অনেক উপভোগ করি। আনন্দ পাই। আমাদের গ্রামেও অনেক ধরণের বিভিন্ন সময়ে অনেক ধরণের পাখি আসে। অতিথি পাখিরা এখানে আসে আবার সময় হলে চলে যায়।
মসজিদের ইমাম আবু তোরাব বলেন, এই কাক পাখি বাড়ি আমাদের এলাকার সৌন্দর্য। এই পাখিগুলো দেখে দর্শকদের মনের মধ্যে আনন্দ জাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিবেশ যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তবে আমাদের মনের আনন্দ প্রেরণা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে।
রাজনগরের মুন্সিবাজার ইউপির সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, হাজার হাজার কাক পাখি এখানে বসবাস করে। সন্ধ্যার পরে বাড়িটাই কাকে কালো হয়ে যায়। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এখানে প্রতিনিয়তই বসে। এগুলো নিয়েই আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার। আমি ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে কাক পাখি, বক পাখিসহ আমাদের এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে মেদিনিমহল গ্রামে স্বাগত জানাই।
জীববিজ্ঞানের শিক্ষক রোকসানা আক্তার জানান, কাক পাখি বিচরণ করে যত্রতত্র। শুধু তাই নয়, মানুষের সান্নিধ্য পেতে এরা বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে। পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। এটি সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। দেশে পাতি কাক ও দাঁড় কাক, এই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভূক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়। অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি।
পরিবেশকর্মী রিপন দে বলেন, একটি বাড়িতে এতগুলো কাকের অবস্থান প্রকৃতির কোন ভাল খবর নয়। নিশ্চয়ই অন্যত্র তার বাসস্থানের অভাব দেখা দেওয়ায় একজাগায় অবস্থান নিয়েছে। তবে যারা আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ। তারা এদেরকে বিরক্ত করছেনা এবং নিজেরা অনেক কিছু ত্যাগ করে এদেরকে থাকতে দিচ্ছে এটা পাখি সংরক্ষনে বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাদের এই পাখিপ্রেম অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত।