দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মৌলভীবাজার এনডিএফের বিক্ষোভ মিছিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ৮:২২ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট(এনডিএফ) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবা ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনা কার্যালয় হতে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়। পরে দলীয় কার্যালয়ে জেলা এনডিএফ’র অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস ও কোষাধ্যক্ষ মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৩০৫ এর সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ সুমন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৪৫৩ এর সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, রিকশা শ্রমিকনেতা মোঃ জসিমউদ্দিন, হোটেল শ্রমিকনেতা মোঃ সুবেল মিয়া প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন করেনা মহামারির অজুহাতে মালিকগোষ্টির নির্মম শোষণে জর্জরিত হয়ে দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছেন। শতকরা ৬২ ভাগ শ্রমিকের আয় কমে গেছে। এরকম অবস্থায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের (চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, তেল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, পিয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা) বাজারে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। তার উপর সরকার এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে, আবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যও বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, পিয়াজসহ সকল দ্রব্যমূল্যের লাগামীহীন উর্দ্ধগতিতে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, দেশ নিয়ে যখন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালরা গভীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি তৈরি করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা প্রত্যাশী সাম্রাজ্যবাদের দালাল দলগুলো সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলে তৎপর। শোষক-শাসক গোষ্টি তাদের কামেয়ী স্বার্থ হাসিলে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করে জনগণের মধ্যে বিভক্তি তৈরির অপতৎপরতায় চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুজামন্ডপে হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট এবং অন্তত ৮ জন নিরিহ জনগণের অকাল মৃত্যুতে সভায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন সাম্প্রদায়িকতার মূল হোতা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালেরা। সাম্প্রদায়িকতার উৎস হচ্ছে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা। তাই এই ব্যবস্থা পরিবর্তন ছাড়া জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করা সম্ভব নয়। দেশের এই কঠিন বাস্তবতায় তিনি সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য এবং সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিশ্চিত করতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান।
সভা থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থাসমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে হত্যা-খুন-গুম বন্ধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালু, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রম আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, সকল কৃষি ও এনজিও ঋণ সুদসহ মওকুফ, ধান-পাটসহ কৃষিপণ্যে ক্রয়ে সকল দূর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করে কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।