অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন
ধলাই নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে বসতভিটা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ অক্টোবর ২০২১, ৬:৪৮ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রহিমপুরে ধলাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে দেশের সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীর, ব্রীজ, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়ছে। ফলে বর্ষাকালের বড় ধরনের ভাঙনের ভয়ে নদী তীরের অনেক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
সরজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকায় ধলাই নদীর তীরের কাছাকাছি অনেক পরিবারের বসবাস। মির্তৃঙ্গা সড়কে ধলাই নদীর উপর নির্মিত স্টিলের ব্রীজের পূর্বদিকে ধলাই নদীর ১ম খন্ডাংশ ও পশ্চিমদিকে ২য় খন্ডাংশ ইজারা নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চলছে ৫-৭ টি ড্রেজার মিশিন দিয়ে বালু উত্তোলন। নদীর বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে নদীর তীর ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে। ফলে বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। সেই সাথে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে অতিরিক্ত শব্দ দূষণে দিশেহারা ধলাই নদীর আশপাশের তীরবর্তী বসতবাড়ীর মানুষগুলো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনজীবনে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক হুমকি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন মানছেন না ইজারাদাররা। আইন অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা থাকলে সে এলাকা থেকে সর্বনি¤œ ১ কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলন করতে হবে। বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হলেও তাতে ব্যবস্থা নিবে কর্তৃপক্ষ। অথচ আমাদের এলাকায় ব্রীজের এক কিলোমিটারের মধ্যেই অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরের বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। সেই সাথে নদীর তীর ভাঙ্গনের স্থান থেকে ৪-৫ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে ইজারাদারের লোকজন।
অভিযোগ করে ধর্মপুর গ্রামের ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম হিমেল বলেন, ‘আমরা তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন শুরু হলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কারের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম চলে গেলে তার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়না। ইতিমধ্যে বসতঘরের ৩ টি রুম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার ভ‚মি সুমাইয়া আক্তার আজই (সোমবার) এ বিষয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন মেনে ইজারাদারকে নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। রহিমপুরের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সজিব পাল বলেন, ‘রহিমপুরে ধলাই নদীর তীর ভেঙে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে তীর থেকে বালু উত্তোলন। উপজেলা প্রশাসন যদি এ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না করে তবে নদীর তীর ভাঙা রোধ করা অসম্ভব। তাছাড়া বর্তমানে তহবিল কম থাকায় এ এলাকার তীরে বাঁধ নির্মানের কাজ করা যাচ্ছেনা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চাহিদা পাঠানো হবে।’