বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ
কালাপাহাড়ের পাদদেশে আকর্ষণীয় ৭ মায়াময় ঝর্ণা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৭:১৪ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
ছাড়িদিকে শুধু উচু নিচু পাহার। কি নেই ওখানে। বাদ পড়েনি প্রকৃতির সঙ্গে মিতালীর কোনো উপকরণই। দৃষ্টি জুড়ে মনখোলা নৈসর্গিক প্রকৃতির লীলা নিকেতন। প্রকৃতির এমন উজাড় করা রুপ মাধুর্য আকৃষ্ট করে যে কাউকে। শীত আর গ্রীষ্ম। দু’মৌসুমে এখানকার প্রকৃতির দু’ধরনের রূপ। সারা বছরই পর্যটকদের মুগ্ধ করতে প্রস্তুত সবুজ প্রকৃতির মৌলভীবাজার। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে প্রকৃতিকে উপভোগ করার মজাই আলাদা। প্রকৃত প্রকৃতিপ্রেমীরা সুযোগ পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন।
প্রকৃতিক বন ও পাহাড়ী বৈচিত্রময় পরিবেশের কারণে পর্যটকদের কাছে এক অনন্য নাম কালাপাহাড়। এটি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়া। ভূপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১১শত ফুট। কালাপাহাড় বৃহত্তর সিলেটের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে খ্যাত।এই কালাপাহাড়টি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত । যার একশত বর্গমাইল আয়তনের এই ইউনিয়নে চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝর্ণা ও লেকসহ অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক নাম কর্মধা। কর্মধার প্রায় ৩০ শতাংশ জায়গা জুড়ে কালাপাড়ের অবস্থান। কুলাউড়া থেকে আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই পাহাড়ের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে পড়েছে এবং বাকি অংশ ভারতের ঊনকোটি জেলায় অবস্থিত।
প্রাকৃতিক ঘণ জঙ্গল, বন্য প্রাণী, সাপ, বানর হাতি, হরিণ একসময় বাঘও ছিলো কালাপাহাড়ে। এই পাহাড় সময়ের সাথে কয়েকটি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। লংলাপাহাড়, হারারগজ পাহাড়, সাড়েরগজ পাহাড় থেকে এখন কালাপাহাড় নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বন বিভাগের কাছে পৃথিমপাশা একোয়ার্ড ফরেস্ট নামে রেকর্ডভুক্ত এই পাহাড়ে রয়েছে আকর্ষণীয় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে পর্যটন প্রিয়দের জন্য প্রকৃতির সর্গ হতে পারে এই কালাপাড়ারটি।
কালাপাহাড়ের আনাছে কানাছে লোকায়িত মানুষের দর্শন পায়নি এমন ঝর্ণাও রয়েছে বেশ কয়েকটি। কর্মধা ট্রাভেলার গ্ৰুপের সাথে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা মেলে আরো আকর্ষণীয় ৭ টি ঝর্ণার। পাষাণের ধর ঝর্ণা, বেলকুমা ঝর্ণা, জাহাজমারা বাবা ঝর্ণা, উপলিয়া সং ঝর্ণা, শোলকুটার সং ঝর্ণা, জাহাজমারা পাদদেশ-১ ও জাহাজমারা পাদদেশ-২ ঝর্ণা ছাড়ার ছোট-বড় আরো কয়েকটি জলপ্রপাত রয়েছে এই পাহাড়ে। এখানে প্রাকৃতিক বনের ভিতরে নৌসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাভেলার গ্ৰুপ অব কর্মধার সদস্য আক্তার হোসেন জানান, কালাপাহাড়ে ছোট বড় অনেকগুলো ঝর্ণা রয়েছে। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে এ পাহাড় অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন সিরিজ হতে পারে।
ট্রাভেলার গ্ৰুপ অব কর্মধার সমন্ময়ক প্রদীপ কুমার সিংহ জানান, আমরা প্রকৃতির টানে একঝাক তরুণ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করি। আজ কালাপাহাড়ে এসেছি। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি আকর্ষণীয় অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলো দেখার পর পাহাড় ভ্রমণের ক্লান্তি দ‚র হয়ে যায় এবং পাহাড় ভ্রমণের অনুপ্রেরণা জোগায়।
জাহাজমারা ঝর্ণা ভ্রমণ করে হাসান আল-মামুন নামে এক পর্যটক বলেন, বয়সের চাপ থাকাসত্বেও প্রকৃতির টানে কর্মধার কালাপাহাড়ে ছুটে এসেছি। এখানে আসার মত সড়ক পথের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু ঝর্ণা গুলোর ছন্দময় পানির কলকলানি ধ্বনিতে সবধরণের ক্লান্তি দূর হয়েগেছে। এখানে সরকারের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হবে।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, ‘কর্মধার কালাপাহাড় অনেক গুণে গুণান্মিত, পাহাড়ের চূড়া থেকে পাশের হাকালুকি হাওর দেখা যায়। এখানে অনেকগুলো ঝর্ণা রয়েছে। যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পাহাড়ি দূর্গম পথ অতিক্রম করে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসে। কালাপাহাড় কে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে টুরিষ্ট পুলিশ ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান বলেন, মৌলভীবাজার সমগ্র জেলার প্রকৃতিই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কর্মধার কালাপাহাড়ের ৭টি ঝর্ণায় যাতে পর্যটকরা যেতে পারে আমরা কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা করবো। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা অভ্যাহত থাকবে।