২৫ হাজার টাকায় ধর্ষণের সমাধান!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৮:৩৬ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার::
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা। সালিশ বৈঠকে অভিযুক্তকে ইজ্জতের মূল্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ওই রাতেই সালিশে বসেন স্থানীয়রা। আর সেখানেই ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মেয়েটির ‘মানহানির’ মূল্য বাবদ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা নেই। এলাকায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে মা ও মেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা বাড়িতে না থাকার সময় রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার পর প্রতিবেশি মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল আলী (৪০) মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় পাশের ঘরের একটি মেয়ে ধস্তাধস্তির দৃশ্য দেখে অন্য লোকজনকে অবহিত করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আব্দুল আলী পালিয়ে যায়।
সালিশকারীদের দাবি, মেয়েটির যে ‘মানহানি’ হয়েছে, সেটির মূল্য হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য সেই ব্যক্তিকে পাঁচ মাস সময় ও দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আমূই গ্রামে ঘটেছে।
মেয়েটির প্রতিবেশী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নেহার বেগম জানান, ভিকটিমের মা উনার বাসায় কাজ করেন। তার বাবা নেই। রোববার দুপুরে মেয়েটির মা বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে প্রতিবেশী একজন মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে মেয়েটি।
ঘটনাটির সালিশকারীদের একজন তৈয়ব আলী। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর স্থানীয়রা সালিশে বসেছিল। তখন ওদের (ভিকটিমের পরিবার) বলা হয়েছিল, আপনারা যদি আইনের আশ্রয় নিতে চান, তাহলে সেটা নিতে পারেন। অথবা বিষয়টি এলাকায় শেষ করতে পারেন। তার (মেয়েটির) যে মানহানি হয়েছে, সেই মানহানির মূল্য হিসবে তাকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। পরে উভয় পক্ষের সম্মতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২১শে অক্টোবর ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসায় সালিশ ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে না কেন জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে তৈয়বআলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা তো তাদের বলছি, আপনারা আইনের আশ্রয়নেন , সমস্যা নেই। ভিকটিম যদি আইনের আশ্রয় না নেয়, কেউ তো তাদের জোর করে ধরে নিয়ে আইনের আশ্রয় দিতে পারবে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মীমাংসাকালে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে ওই তরুণী ও সালিশকারীদের স্বাক্ষর রাখা হয়েছে।
মেয়ের মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার প্রতিবেশী বলেন, তিনি কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। সহজ সরল মানুষ তিনি । মেয়েটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বয়স ২১/২২ বছর হবে। ধর্ষন চেষ্টার ঘটনাটি এলাকায় প্রকাশিত হলে লাজ লজ্জার ভয়ে সালিশ মেনে নিয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত আব্দুল আলী পলাতক রয়েছে। চেষ্টা করে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভুষন রায় বলেন, পুলিশের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাকারি ও সালিশকারীদের বিরোদ্ধে মঙ্গলবার কুলাউড়া থানায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।