লাটিটিলা বনভূমিতে সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে কমলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::
সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলার লটিটিলা বনভূমিতে সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে কমলা। অনাবৃষ্টিতে ফুল ঝড়ে যাওয়ায় সাময়িক বির্পযয় দেখা দিলেও আশানুরূপ ফলন হয়েছে। লাটিটিলা বনভূমির লালছড়া, রূপা ছড়া, শুকনা ছড়ার টিলায় টিলায় ছোট বড় কমলার গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে সবুজ কমলা।
এ অঞ্চলের কমলার আছে বাহারী নাম। নাগপুরি, খাসি, ছাতকী, চায়নিজ কমলা। অঞ্চল ভেদে এই নামকরণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মুর্শেদের বাড়ির চার পাশে টিলার ঢালে সারি সারি কমলাগাছ। গাছভর্তি ফল। স্থানীয় জাতের কমলার পাশাপাশি সেখানে রয়েছে বেশ কিছু চায়নিজ কমলার গাছ। চায়নিজ কমলার গাছ ও ফল স্থানীয় জাতের চেয়ে আকারে ছোট।
জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলাচাষি মুর্শেদ মিয়ার বাগানে বিভিন্ন জাতের কমলা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর বৃষ্টির অভাব থাকলেও পানি সেচ দেওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান।
কমলার বাগান ঘুরে দেখার ফাঁকে কথা হয় বঝি টিলার জয়নুল মিয়া ও লাল টিলার মুর্শেদ মিয়ার সাথে। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জাতের কমলার চাষ করছেন। তাদের দুটি বাগানে স্থানীয় জাতের দুই শতাধিক কমলার গাছ রয়েছে।
অনেক দিন আগ থেকে হায়ছড়া, লালছড়া, শুকনাছড়া, রুপাছড়া, জরিছড়া ও কচুরগুল গ্রামের লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে নিজ উদ্যোগে কমলা চাষ করে আসছেন। ২০০১ সালের দিকে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ এলাকায় নতুন রুপে কমলা চাষ শুরু হয়।
মুর্শেদ মিয়া সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি নার্সারি থেকে কৌতূহলী হয়ে ১৮০টি চায়নিজ কমলাগাছের চারা কিনে আনেন। বাগানের ফাঁকে ফাঁকে লাগান এসব চারা।
জয়নুল মিয়া বলেন, চায়নিজ কমলার একেকটি গাছে এক থেকে দেড় হাজার ফল ধরেছে। কার্তিক মাসের শেষ দিকে ফল পুরোপুরি পাকবে। তখন বিক্রি শুরু করবেন। স্থানীয় জাতের কমলায় রোগবালাই বেশি দেখা দেয়। তবে চায়নিজ কমলায় এখনো রোগবালাই দেখা দেয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে যে সব বাগান আছে সেখানে তেমন সমস্যা হয়নি। আব্দুল গফুর, মুর্শেদ মিয়াও জয়নুল মিয়ার বাগানের চায়নিজ কমলার ফলন সরেজমিনে দেখাশুনা চলছে।
তিনি আরো বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে ফুল ঝড়ে গিয়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আশানুরূপ ফলন হবে।
মুর্শেদ মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফলটির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করি। ছোট সাইজের কমলার জন্ম চীনে। সে কারণে বাজারে এটা চায়নিজ কমলা নামে পরিচিত। স্থানীয় জাতের চেয়ে চায়নিজ কমলা মিষ্টি বেশি। ফলে অনেকেই সেটা পছন্দ করে।
কমলাচাষি মানিক মিয়া ও তাঁর স্ত্রী ছালেহা বেগম বলেন, আর কিছুদিন পরেই দেশি জাতের কমলা বাগানের গাছ থেকে পাড়া হবে। এসব কমলা পাইকারদের কাছে বিক্রি হবে। তাঁদের দুটি কমলাবাগানে ৩০০ গাছ রয়েছে।
ফলন সম্পর্কে জানতে চাইলে ছালেহা বললেন, ‘এইবার কমলার ফুল ঝড়ে যাওয়ার পরও মোটামোটি ফল আসছে।’ সাফারিপার্ক নির্মাণের খবর শুনে শঙ্কায় আছি। হতাশায় এলাকার পুরুষরা কমলার পরিচর্যা ছেড়ে দিয়েছেন। কমলার বাগান থাকবে কি? না, আমরা থাকব কি? না এমন প্রশ্ন দগ্ধ করছে এলাকায় বসবাসকারীদের।
এলাকাবাসী জানান, লালছড়ার আশপাশের হায়ছড়া শুকনাছড়া, রুপাছড়া, জরিছড়া ও কচুরগুল গ্রামের টিলায় টিলায় রয়েছে কমলার বাগান। বির্যয়ের পরও বিভিন্ন বাগানে এবার কমলার ফলন আশানুরূপ হয়েছে।
চাষিরা জানান, এখানকার কমলা দেশি জাতের। আকারভেদে ১০০ কমলা এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়। সিলেট, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও চট্টগ্রামের ফলের আড়তদারেরা এখান থেকে কমলা কিনে নেন। এখানে বছরে কোটি টাকার কমলা বেচাকিনা হয়।
বানর ও কাঠবিড়ালি ফল নষ্ট করে ফেলে। সে কারণে পুরোপুরি পাকার আগেই চাষিরা কমলা পেড়ে বিক্রি করে ফেলেন।
জেলার ১৫৪ হেক্টর টিলাভূমিতে কমলার চাষ হয়। গাছের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ বাগান আছে ১৯৩টি।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারি বলেন, কমলা চাষীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাময়িক বিপর্যয়ের পরও আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কমলা চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে জুড়ী, বড়লেখা, কুলাউড়া উপজেলায়। কমলা চাষীদের আমরা পরামর্শ দিয়ে, সহযোগিতা দিয়ে আসছি।