অজানা আগুনে পুড়লো মাসুকের চারটি গরু
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ২:০৮ অপরাহ্ণ
‘নিজের ঘর জ্বলে গেলেও এতো কষ্ট পেতাম না। আমার গরু গুলো পুড়ে মরে গেলো। হায়মান জাত হওয়াতে গরু গুলোতো আর আগুন দেখে চিৎকার দিতে পারে নি। গরু গুলো অনেক প্রিয় ছিলো। এগুলো নিয়ে ছিলো আমার অনেক স্বপ্ন। আমার সব শেষ হয়ে গেলো বাবা…! এইটুকু যে আমার শেষ সম্বল ছিলো।’ কেঁদে কেঁদে এমনটাই বলছিলেন মাসুক আহমেদ।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে সাতটার দিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের পূর্ব বড়ডহর গ্রামের মাসুক মিয়ার বাড়ির গোয়ালঘরে এ অগ্নিকাÐের ঘটনাটি ঘটে। এতে চারটি গরু পুড়ে মারা যায়। ক্ষতি হয় দুটি ঘরের।
মাসুক আহমেদ একজন কৃষক। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে ভালোই চলছিলো সংসার। মারা যাওয়া গরু গুলো ছিলো তার শেষ সম্বল। চারটি গরু হারিয়ে দুচোখে এখন অন্ধকার দেখছেন মাসুক আহমেদ। তিনি বলেন, বিকেলে আমার ছেলে গরু গুলো গোয়ালঘরে এনে বেঁধে রাখে। আমি সন্ধ্যায় বাজার থেকে এসে নিজের ঘরে ঢুকার আগে গরু ঘরে যাই। গিয়ে তাদের ঠিকটাক মতো বেঁধে রাখি এবং কয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর পর কয়েল সাথে করে নিয়ে আসি।
ঘণ্টাখানিক পর আমার স্ত্রী ডাক দিয়ে বলে বাইরে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে দরজা খুলে বের হলে দেখি গরু ঘরে আগুন। চারদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। দৌড়ে গিয়ে গরুগুলোর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চিৎকার দিলে সাথে সাথে আশেপাশের মানুষ জড়ো হন। সবার সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু গরুগুলোকে আর বাঁচানো যায়নি। হঠাৎ করে কোথা থেকে যে এই আগুন লাগলো সেটিও বুঝে উঠতে পারতেছি না। এখানে কারেন্টেরও কোনো লাইন নাই। আগুনটা খড়ের ঘর থেকে লাগে মনে হয়।
মাসুক আহমেদ বলেন, আমার কিছু জায়গা আছে সেগুলো কৃষি কাজ করি। এই কৃষি দিয়ে আমার সংসার চলে। আর গরু গুলো নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। এই চারটি গরুই ছিলো আমার। এর মধ্যে দুটি বাচ্চাকে আদর যতেœ করে লালন পালন অরে আসছি, যাতে কিছু দিন পর এগুলো বিক্রি করতে পারি। দুধ বিক্রি করেও কিছু টাকা উপার্জন করতেছি। আমার ছেলের লেখাপড়ার খরচ এগুলো থেকে দিতাম। তারও প্রিয় ছিলো গরু। সারাদিন গরুর পিছে পিছে সে থাকতো।
মাসুক আহমেদের গোয়ালঘর ও খড়ের ঘর পুরোটা ছাঁই হয়ে যায়। এতে কৃষকের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেন।
এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা এহসান তামিম বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা তার বাড়িতে যাই। মারা যাওয়া সুস্থ সবল গরুগুলো দেখে খুবই কষ্ট লাগছে। উনার গরুগুলো অনেক সুন্দর ছিলো।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী (লিয়াকত) বলেন, ঘটনাটি আসলেই কষ্টকর। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে উনার বাড়িতে গিয়েছি। পুনরায় গরু কিনে দেয়ার জন্য উপজেলায় আবেদন করাবো।