গ্রন্থালোচনা : সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৫:০২ অপরাহ্ণ
বই : সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (প্রথম খন্ড)
লেখক : সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.)
অনুবাদ : আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী
প্রকাশনী : মুহাম্মদ ব্রাদার্স
মুদ্রিত মূল্য : ১৬০/= (চতুর্থ প্রকাশ, জানু : ২০০৩)
লক্ষ্মৌয়ের ‘জামাআ’তে দাও’য়াত-ই-ইসলাহ্ ও তাবলীগ’ এর পক্ষ থেকে যুগ-জিজ্ঞাসার প্রেক্ষাপটে সপ্তাহব্যাপী এক সেমিনারের আয়োজন করেছিল ১৩৭২ হিজরীর মুহাররম মাসে। আলোচ্য বিষয়ের শিরোনাম ছিল ‘সংস্কার ও পুণর্জাগরণের ইতিহাস এবং উক্ত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব’। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও আলোকপাত করার দায়িত্ব ন্যস্ত হয় সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) এর উপর। প্রায় সপ্তাহকাল ব্যাপী তিনি এ বিষয়ের উপর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ও তাহকীকী আলোচনা করেন। ফায়দা ও মাসলাহাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে যখন তিনি চাইলেন এ বিষয়ের আরও প্রচার ও প্রসার হোক তখন তিনি অনুভব করলেন এ কাজ অত্যন্ত মনোযোগ এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে করা দরকার। তাঁর ভাষায় ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিষয়, যার ওপর (আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান মুতাবিক) বিস্তারিত ও পরিপূর্ণ কোন আলোচনা হয় নি। এটাই ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামী সাহিত্যের একটি বড় শূন্যতা যা সত্বর পূরণ হওয়া দরকার। এই শূন্যতা থাকার কারণে কোন কোন চিন্তাশীল মহলে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, ইসলাম ও মুসলিম ইতিহাসে সংস্কার, রেনেসাঁ তথা পুনর্জাগরণ ও বিপ্লবের ধারাবাহিক ও অবিচ্ছিন্ন কোন বিবরণী পাওয়া যায় না, বরং এতে বিরাট ও দীর্ঘ শূন্যতাই পরিদৃষ্ট হয়, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী বিস্তৃত।’
বইটি লিখার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন ঃ ‘এজন্যে সাধারণ ইতিহাস পাঠই যথেষ্ট নয় ; বরং বিভিন্ন ধর্মমত, নানা জ্ঞান ও বিষয় শাস্ত্রের ইতিহাস অধ্যয়ন প্রয়োজন।’ বস্তুতঃ বইটি অধ্যয়নমাত্রই যে কোন পাঠক উপলব্ধি করবে এ অমূল্য কথামালার প্রতিটি পুঁথি গাঁথতে গিয়ে সহস্রবার ডুব দিতে হয়েছে ইতিহাসের অতল সমুদ্রে, ধ্যানমগ্ন হতে হয়েছে মনীষীদের চরিত্র বিশ্লেষণে। বইটিতে রয়েছে, ইসলামী ইতিহাসের স্মরণীয়, শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় মনীষীগণের ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক বিশ্লেষণ, তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থা। এর পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন ফিতনাহ্ ও সে বিষয়ে মৌলিক তত্ত্ব, উপাত্ত এবং অবসান সব কিছুর উপরই অত্যন্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণভাবে আলোকপাত করেছেন। জীবনী মানেই যে শুধু চাক্ষুষ পদাঙ্ক নয়, বরং এর গভীরেও রয়েছে অনেক শিক্ষা, উপদেশ – বইটি যেন এ কথারই নিরেট প্রমাণ।
এর প্রথম খন্ডে আলোচিত মনীষীগণের নাম নিম্নরুপ –
১. খলীফা ওমর ইবন আবদুল আযীয রহ., ২. হাসান বসরী রহ., ৩. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ., ৪. আবুল হাসান আশআ’রী রহ., ৫. ইমাম গাযালী রহ., ৬. শাইখ আবদুল কাদির জিলানী রহ., ৭. আল্লামা ইবন জাওযী রহ., ৮. নূরুদ্দীন জঙ্গী রহ., ৯. সালাহুদ্দীন আইয়্যুবী রহ., ১০. শাইখুল ইসলাম ইযযুদ্দীন ইবন আবদুস সালাম রহ., ১১. আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী রহ.
প্রতিজন মনীষীর উপর সাবলীল ও সুন্দর আলোচনা কড়া নাড়বে প্রতি মানুষের হৃদে। শুধু কর্মজীবনই নয়, এতে রয়েছে প্রত্যেকের মুআ’মালাম-মুা’আশারাত, আখলাক্ব, বৈপ্লবিক চিন্তাধারা ও তার বাস্তবায়ন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা ও সামগ্রিক পর্যালোচনা।
এ খণ্ডে আরও রয়েছে হাদীস ও ফিক্বহের সংকলনের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস, মুহাদ্দিসীনে কেরামগণের দুর্লভ বৈশিষ্ট্যের নজীর এবং চার ইমাম সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা।
সারকথা, বইটি পাঠে শুধুমাত্র মনীষীগণের সম্পর্কেই জ্ঞান হাসিল হবে, এমন ভাবাটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং একে ইসলাম ও ইসলামের ঐতিহাসিক আভিজাত্য ও এতকাল পর্যন্ত ইসলামী পথচলার এক বিরল ডায়রী বললেও ভুল হবে না।
অনুবাদের সাহিত্যরসে কিছুটা ঘাটতি সত্ত্বেও সারল্যতার দরুণ এর প্রতিটি বাক্যই যে কোন বয়সের পাঠক অন্তরে ধারণ করতে সক্ষম হবেন। বিশেষতঃ দুরন্ত কৈশোর সময়টা যারা পার করছে, তাদের জন্যে এ বইটি হবে অত্যন্ত ফায়দাজনক এবং ই’বরতপূর্ণ। এতে করে মুসলিম যুগশ্রেষ্ঠ রাহবারগণের আলোতে সে আলোকিত হবে। যে আলো তাকে রাস্তা দেখাবে তারুণ্য, যৌবন এবং বার্ধক্যকালেও।