উদ্বোধন করবেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী
মির্জা শহিদপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলহাজ আতাউর রহমান চৌধুরী হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা ॥ উদ্বোধন ২৯ জানুয়ারি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ৬:০৮ অপরাহ্ণ
সালাহ্ উদ্দিন ইবনে শিহাব, মির্জা শহিদপুর থেকে ফিরে :
সিলেটের উসমানীনগর থানার মির্জা শহিদপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলহাজ আতাউর রহমান চৌধুরী হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা ও মোহাম্মদ ইছহাক মিয়া চৌধুরী এতিমখানা। আগামী ২৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে পথচলা শুরু করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। এর উদ্বোধন করবেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। একান্ত নিজস্ব অর্থায়নে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে অবস্থিত সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার ও জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের পরিচালক আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে অবস্থিত ইসলামিক প্রতিষ্ঠান সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের প্রিন্সিপাল শায়খ সাইয়্যিদ ফাদি জুবা সিরিয়া, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মুহতারাম সভাপতি আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ এমএম বাহাউদ্দীন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাটেলাইট চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাজ চৌধুরী, ঢাকা হাইকোর্ট জামে মসজিদের খতিব, অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী, খানকায়ে লতিফিয়া ইউকের পরিচালক সূফি ক্বারী মো. আব্দুল মুনতাকিম, যুক্তরাজ্যের ব্রিকলেন জামে মসজিদের খতিব মুহাদ্দিস মাওলানা নজরুল ইসলাম, সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আলহাজ হাফিয সাব্বির আহমদ, যুক্তরাজ্যের আবাডিন শহরের বিশিষ্ট ব্যববাসী ও সাপ্তাহিক পূর্বদিক পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ মো. চন্দন মিয়া, সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার ইউকের পরিচালক ও আলহাজ শামছুদ্দীন অ্যাডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের পরিচালক আলহাজ মো. জসিম উদ্দিন, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রির প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হাসান প্রমুখ।
সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উসমানীনগর থানার গোয়ালাবাজার থেকে পশ্চিমদিকে প্রায় ৫ কি.মি দূরত্ব এগিয়ে মির্জা শহিদপুর গ্রাম। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। পারিবারিকভাবে ধনাঢ্য এই পরিবারের সকল সদস্যই থাকেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে ব্যবসা ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছেন। এসব ব্যস্ততার মাঝেও ইসলামের খেদমতে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তিনিসহ তার সহকর্মীরা নিজস্ব জায়গায় গড়ে তুলেছেন সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার নামে ৩০ হাজার স্কয়ারফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বি-তল ভবন বিশিষ্ট মাদরাসা ও মসজিদ। বছরে একবার হলেও বাড়িতে আসেন তিনি। নিজ এলাকায় একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন অনেক দিন ধরে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি এই মাদরাসার কাজে হাত দেন বিগত বছরের (২০১৯) শুরুর দিকে। এক বছরের মাথায় দ্রুততম সময়ে শেষ করেন প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ। গড়ে উঠে ৬ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তন বিশিষ্ট ৩ তলা ভবন। প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তাঁর বাবা আলহাজ আতাউর রহমান চৌধুরীর নামে এবং দাদা ইছহাক চৌধুরীর নামে এতিমখানার নামকরণ করেছেন।
আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মাদরাসা নিয়ে তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা জানান। তিনি বলেন, এলাকার শিক্ষার্থীরা যারা মাদরাসায় পড়তে ইচ্ছুক তারা যাতে সহজেই পড়াশুনার সুযোগ পায় সেজন্যই এই প্রতিষ্ঠান করেছি। সঙ্গতিহীন (অভাবগ্রস্থ) শিক্ষার্থী যারা আছেন তারা যাতে ফি সাবিলিল্লাহ এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে সদকায়ে জারিয়াহ হিসাবে আল্লাহ যাতে কবুল করেন এই প্রত্যাশা করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, ‘ফুলতলী ছাব বাড়ির এতিমখানা থেকে বড়ছাব (আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী) ৩০ জন এতিম ছাত্র দিবেন। তাদের দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান শুরু হবে। এই ৩০ জনের কিছু ছাত্র হিফয শাখায় ভর্তি হবে কিছু ছাত্র একাডেমিক লাইনে পড়বেন।’
ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন সাবেক বিআরটিসির চেয়ারম্যান এমএম ইফতেখার-ই-আলম। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, সরকারিভাবেও এতো দ্রুততম সময়ে এরকম প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। প্রবাসী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। এ থেকেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আন্তরিকতা ও দরদ বোঝা যায়। এখন শিক্ষকরা যদি ছাত্র কালেকশন ও পড়াশুনার মান বৃদ্ধি করে একে এগিয়ে নিতে পারেন তাহলেই সফল হওয়া যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আলহাজ ডা. কুতুব উদ্দিন অ্যাডুকেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি তার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও তার গোটা পরিবার ইসলামের খেদমতে অনেক কাজ করছেন। নিজ বাড়ির পাশে এই মাদরাসা ও এতিমখানাও খেদমতের একটি অংশ। মানুষ আল্লাহর ওয়াস্তে দ্বীনের খেতমত করলে আল্লাহ বড় প্রতিদান দেন।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, তিনতলা ভবনটি ইংরেজি বর্ণমালা ‘ইউ’ আকারে নির্মাণ করা হয়েছে। সামনে পাকা ফ্লোরের মাঠ। মাদরাসার সম্মুখে দুটো দৃষ্টিনন্দন গেইট তৈরির কাজ চলমান। পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ আছে প্রায় এক একর (১০০ শতাংশ) জায়গা। ভবনের তৃতীয় তলায় আবাসিক ও এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে থাকার জায়গা। নিচতলায় অফিস রুম, শিক্ষক মিলনায়তনসহ বাথরুম ও ওযুখানা রয়েছে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয়তলায় রয়েছে পাঠকক্ষ। আপাতত আলিয়া শাখায় প্রথম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি চলছে। একইভাবে হিফয শাখায়ও ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সার্বিক নির্দেশনা ও দেখভালকারী সিলেটের প্রবাসী ফয়ছল আহমদ চৌধুরী জানান, শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলাম। আল্লাহর মেহেরবানীতে প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান যাতে অত্র এলাকায় ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে সেই প্রত্যাশী করছি।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ২৯ জানুয়ারি আলহাজ আতাউর রহমান চৌধুরী হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা ও মোহাম্মদ ইছহাক মিয়া চৌধুরী এতিমখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী।