রাজনগরে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সূচনা প্রকল্প’
পুষ্টি সচেতনতার অভাবে বাড়ছে খর্বাকৃতির হার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ৩:২৩ অপরাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল, রাজনগর
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে খর্বাকৃতির শিশুর হার শতকরা ৩৬ ভাগ থাকলেও সিলেট বিভাগে খর্বাকৃতি মানুষের হার শতকরা ৪৬ দশমিক ৬ ভাগ, যা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। গ্রামীন দরিদ্র-অতিদরিদ্র ও চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্যা উত্তরণে গ্রামীণ নারীদের সচেততনতা বাড়াতে ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সূচনা প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংসারের আয় বর্ধনমূলক বিভিন্নকাজের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে সূচনা প্রকল্পের কাজ।
মৌলভীবাজারের রাজনগরে পুষ্টি সচেতনতা বাড়িয়ে খর্বাকৃতির শিশুর হার হ্রাস করার লক্ষ্যে সূচনা প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারের পুষ্টিমান, জীবিকায়ন উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সূচনা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস)।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০১৫ এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও সরকারী সংশ্লিষ্ট দফতরের সহযোগিতায় ২০১৭ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে মুন্সিবাজার, পাঁচগাঁও ও মনসুরনগর ইউনিয়নে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইউকেএইড ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যৌথ অর্থায়নে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের নেতৃত্বে এবং হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ফিস ও আইডিই-বাংলাদেশের কারিগরী সহায়তায় গ্রামীণ দরিদ্র ও অতি দরিদ্র নারীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, শাকসবজি, মাছ ও গবাধিপশু পালন, নারীদের আত্মনির্ভরশীল, নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন ধরণের কাজের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে মাছের পোনা, শাকসবজির বীজ, হাঁস-মুরগী, গবাধিপশুসহ অন্যান্য উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০১৭ সালে সিএনআরএস মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের ৯৩০টি উপকারভোগী পরিবার বাছাই করে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের ১৬৬৭টি পরিবার ও মনসুরনগর ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের ১৬২১ টি পরিবার নিয়ে কাজ করছে এনজিওটি।
রাজনগর সদর ইউনিয়নে ১৮টি গ্রামে ১২৬৮টি পরিবার ও টেংরা ইউনিয়নে ২৪টি গ্রামে ১২৩৩টি উপকারভোগী পরিবার রয়েছে। ইতিমধ্যে বাকী ৩টি ইউনিয়নে (ফতেপুর, উত্তরভাগ ও কামারচাক) সার্ভের কাজ চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ বছর কাজ চলবে সূচনা প্রকল্পের। ২০২২ সালে মোট ৮টি ইউনিয়নে দাতা সংস্থার সহায়তায় সূচনা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সেভ দ্যা চিল্ড্রেন, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ ও সিএনআরএস এর কর্মকর্তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তারের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ এই প্রকল্পের উপকারভোগীদের নিয়ে অ্যাডভোকেসী কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন রাজনগর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ জিলাল উদ্দিন আহমদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তি চক্রবর্তী, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হুসনে আরা তালুকদার, সদর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ ছালেক, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস, সেভ দ্যা চিল্ড্রেনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার মো. কাজী আলম, সিএনআরএস এর জেলা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. আনিসুর রহমান টিটু, উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আবু বকর, ইউপি সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, মামুনুর রশিদ প্রমুখ।