৬নং কাদিপুর ইউনিয়ন
কুলাউড়ায় সহকর্মীকে যৌন হয়রানী ও জন্মসনদ জালিয়াতির অভিযোগ, ডিজিটাল উদ্যোক্তাকে অব্যাহতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৯ অক্টোবর ২০১৯, ৭:৪১ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার, কুলাউড়া ::
কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক সম্বুর বিরুদ্ধে সহকর্মী মহিলা উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানী ও জন্মসনদের সাল জালিয়াতি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণীত হওয়ায় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া সাধারণ সভা ডেকে তাকে পদ থেকে অব্যাহিত প্রদান করেছেন। অব্যাহতির রেজুলেশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়েছে।
সাধারণ সভার রেজুলেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসাবে দায়িত্বরত আছেন সুকুমার মল্লিক। তিনি জন্মের সাল পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ প্রদান করে নাগরিকদের সাথে জালিয়াতি করে আসছেন। জন্ম সনদ সংশোধেেনর কোন আবেদন বা ডকুমেন্ট ছাড়াই তিনি চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করে জন্মসনদ প্রদান করেন। এ কাজে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন তিনি। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেন নি। সম্প্রতি নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হতেই এই উদ্যোক্তা জন্ম নিবন্ধন সনদ এডিটিং করে অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
এদিকে তার এক সহকর্মী নারী উদ্যোক্তার সাথে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে সুকুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে। এমনকি তাকে ভারতে নিয়ে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। সময়ে সময়ে তার শরীর স্পর্শ করেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সচিবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ স্থানীয় মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, চলতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া দায়িত্ব নেয়ার পর ছুটি ও অনুমতি না নিয়েই তিনি টানা ১৫দিন ভারত সফর করে এসেছেন।
এ বিষয় নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়ার সভাপতিত্বে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সভায় তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় সর্বসম্মতিক্রমে সুকুমার মল্লিককে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
যৌন হয়রানীর শিকার কাদিপুর ইউনিয়নের মহিলা উদ্যোক্তা জানান, সুকুমার মল্লিককে আমি অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু তিনি আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন, এমনকি মুসলিম থেকে হিন্দু বানিয়ে বিয়ে করার চাপও সৃষ্টি করেন। গত ঈদুল আযহার পর আমাকে ভারতে বেড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেন সেখানে একটি বড় মন্দির আছে। তুমি আমার সাথে গিয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নারী আরো বলেন, সুকুৃমার মল্লিক শরীরে স্পর্শ আমাকে করে যৌন নিপীড়ন করেন বিষয়টি লজ্জা ও ভয়ে প্রথমে কাউকে বলিনি। পরে অতিষ্ট হয়ে পরিষদকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুকুমার মল্লিক পূর্বদিককে আজ ৯ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বলেন, জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রদান করেন সচিব আর এর নিবন্ধক চেয়ারম্যান। এর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমাকে ইউনিয়ন থেকে তাড়ানোর জন্য ইউনিনিয়ন পরিষদের সচিব সুমন পালিত এই ষড়যন্ত্র করছেন। গত ১ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সচিবের গাফলতির বিষয়ে আমি কথা বলেছি। পরে তিনি আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে উঠা সহকর্মীর সাথে যৌন হয়রানীর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও তিনি আমার সাইকেলে হয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়েছেন। আমার ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহিন ও বানোয়াট। সামাজিকভাবে আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।
কাদিপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তার বিরুদ্ধে জন্ম সনদ জালিয়াতির অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরও জন্ম নিবন্ধন দিতে স্থানীয়দের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়। এছাড়া অফিসের মহিলা উদ্যোক্তার সাথেও অনৈতিক প্রস্তাবসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পরিষদের সর্বসম্মতিক্রমে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাকে অব্যাহতির ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন হাতে পেয়েছি। তার দুর্র্নীতি ও মহিলা উদ্যোক্তার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।