রাজনগরে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন, ভাঙন হুমকিতে নদী তীরের গ্রামগুলো
প্রকাশিত হয়েছে : ১ অক্টোবর ২০১৯, ৬:১৮ অপরাহ্ণ
রাজনগর প্রতিনিধি ::
রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর অংশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। ড্রেজার স্থাপনের পর এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে তা সরিয়ে নিলেও আবারো তা স্থাপনের পাঁয়তারা চলছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর ওই স্থান থেকে বালু পলি উত্তোলন করা হলে ভাঙনের মুখে পড়বে উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের ৮-১০টি গ্রাম। এতে নিঃস্ব হবে শতাধিক পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নে কেশরপাড়া মৌজার কুশিয়ারা নদী (১২১৭ দাগে) থেকে বালু-পলিমাটি তুলার জন্য ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করেছিলেন সদর উপজেলার উদারাই গ্রামের আশরাফ উদ্দীন আহমদ।
এ সময় রাজনগর উপজেলার তৎকালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলামের নির্দেশে স্থাপন করা ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। এ সময় তাকে যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে বললেও তিনি পান্নি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫/৮/২০১৫ ইং তারিখের ১৬১ নং স্মারকের একটি পত্র দেখান। এতে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বালু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে দেখা যায়। পরে তার বিরুদ্ধে উত্তরভাগ ইউনিয়নের তহশিলদার বাদী হয়ে রাজনগর থানায় মামলা (৩৭/১৭) করেন। মামলাটি এখানো চলমান রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর আবারো উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ওই এলাকায় মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুদ্দীন আহমদ বালু ও পলিমাটি তুলার জন্য আবারো ড্রেজার মেশিন স্থাপন করতে যান। এতে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের লোকজন বাধা দেন। ড্রেজান স্থাপনের জন্য আশরাফুদ্দিন রাজনগর থানা পুলিশের সহায়তাও নেন। তবে এলাকাবাসীর বাধার মুখে তিনি ড্রেজার স্থপান করতে পারেন নি।
এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, এখান থেকে বালু উত্তোলন করলে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী সুরিখাল কামালপুর, কালারবাজার, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, জুড়াপুরসহ ১০-১২টি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে। এছাড়াও ইতোমধ্যে এসব গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙনের কারণে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে শতাধিক পরিবার। এসব গ্রাম রক্ষা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙন হ্রাসের জন্য কোন ভাবেই বালু উত্তোল করা সম্ভব নয়। স্থানীয়রা বলছেন, এসব গ্রাম রক্ষায় প্রয়োজনে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছফু আহমদ বলেন, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখান থেকে বালু উত্তোলন করলে ১০-১৫টি গ্রমের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এখান থেকে বালু উত্তোলনে এলাকাবাসীর আপত্তি রয়েছে। তাই আমরা বাধা দিয়েছি।
মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুদ্দীন আহমদ বলেন, আমি লিজ নিয়েছি। সরকারের টাকা জমা দিয়েছি। লিজকৃত এলাকার কয়েকটি স্থানে খনন হয়েছে। এখানে এসে বাধা দেয়া দেয়া হচ্ছে। আগের সময়ে কাগজের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রক্রিয়াধীন ছিল। এজন্য মামলা করেছিলেন তৎকালীন ইউএনও।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, আমি বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখছি। এখান থেকে কারা বালু তুলছে। অবৈধভাবে কেউই কিছু করতে পারবে না।