চার মাস থেকে সেতু ভাঙা, দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ৬:৫৬ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার, কুলাউড়া ::
কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার মধ্যে চলাচলকারী বাইপাস বরমচাল-মুন্সিবাজার নতুন পাকা সড়কের একটি ব্রিজ ভেঙে প্রায় চার মাস যাবৎ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ওই দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ব্রিজ ভাঙা থাকায় স্থানীয়রা নিজেরা চাঁদা তুলে একটি সাঁকো তৈরি করে শুধু লোকজন যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এই সড়কের আরও দুইটি ব্রিজের অবস্থাও জরাজীর্ণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্সের অধীনস্থ কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানের ভিতর দিয়ে বৃহৎ জনসাধারণের সুবিধার্থে রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগান হয়ে মুন্সিবাজার, মৌলভীবাজার ও সিলেটে যাতায়াতের জন্য বাইপাস এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিলো।
২০০৮/০৯ অর্থ বছরে তৎকালীন বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাাহান এই সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করলে চলতি বছরে কুলাউড়া এলজিইডি সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে।
কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা এলজিইডি’র অধীনে মোট প্রায় ৮.৮৫ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা অংশে প্রায় ৫.৮৫ কি.মি. এবং রাজনগর উপজেলা অংশে প্রায় ৩ কি.মি. সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। কুলাউড়া অংশে এই কাজে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা এবং রাজনগর অংশে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা মোট ৬ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা।
এদিকে কাজ শুরুর আগে এই সড়কটি ছিলো কাঁচা। ব্রিজগুলো ছিলো অনেক পুরনো। তবে রাস্তার অবস্থা ভালো না থাকায় আগে ভারী যানবাহন চলাচল কিংবা অতিরিক্ত যান চলাচল ছিলো না। তাই ওই ব্রিজ দিয়ে অনায়াসে মানুষ যাতায়াত করতে পারতো। কিন্তু সড়কটি পাকাকরণ হওয়ায় কম সময়ে যাতায়াতের জন্য ভারিযানসহ বিভিন্ন শ্রেণীর যান এই সড়কটি ব্যবহার করছে। এতে ওই পুরনো ব্রিজগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় ধসে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজ ভাঙা থাকায় বিকল্প সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন মানুষ। স্থানীয় জনগোষ্ঠী বেশীরভাগ চা শ্রমিক হওয়ায় ওই সাঁকো নির্মাণের সময় চাঁদা দিতে পারেননি। তাই তারা বেশ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা ব্রিজ দিয়েই চলাচল করছে। নতুন পাকা এই সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী, রোগীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। সড়কের কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই ব্রিজটির মাঝামাঝি ধেবে যায় এবং ব্রিজের দুই পাশের পাকা অংশ ধসে পড়ে।
স্থানীয় খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা মজনু সুয়ের বলেন, অনেকদিন যাবৎ ব্রিজটির অবস্থা জরাজীর্ণ ছিলো। চার মাস আগে পুরোপুরি ধসে পড়েছে। ফলে রোগী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিপদকালীন সময় চলাচলের জন্য স্থানীয়রা সকলে মিলে ওই বিকল্প সাঁকো নির্মাণ করেছি।
বরমচাল ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মি বলেন, এই ব্রিজটি বন্ধ হওয়ায় আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ছে না এই ভাঙা ব্রিজের কারনে। স্থানীয়দের মনে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত এই ব্রিজটি চালু করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা অতীব জরুরী।
কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি, বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাজাহান বলেন, অল্প সময়ে মৌলভীবাজার ও সিলেটে যাতায়াতের জন্য বরমচাল, ভূকশীমইল ও ভাটেরার মানুষের সুবিধার্তে এই সড়কের প্রস্তাবনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানকার স্থানীয়রা ছাড়াও চা বাগানের শ্রমিকরা অনেক উপকার ভোগ করবে। তবে একটি ব্রিজের জন্য সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে,দ্রুত তা পুণনির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
কুলাউড়া এলজিইডি প্রকৌশলী ও রাজনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মু. ইসতিয়াক হাসান বলেন, ইতিমধ্যে ওই ব্রিজটির মাটি টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ব্রিজসহ রাজনগর অংশের আরও দুইটি জরাজীর্ণ ব্রিজ পুণঃনির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমোদন আসলেই ট্রেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।