বিরল রোগে আক্রান্ত ভাইবোনের বাঁচার আকুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ৫:৫৮ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার :
একযুগ থেকে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছেন কমলগঞ্জের সিরাজ ছালেকিন (১৮) ও তার দুই ছোট বোন রিমা বেগম (১৫)। ইতোমধ্যে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ শিশু সাদেকুর রহমানেরও দেখা দিয়েছে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। স্থানীয় চিকিৎসকরা রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারছেন না। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না জঠিল ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনজন। এ অবস্থায় অসহায় পরিবারটি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফখরুল ইসলাম ছোট একটি বাড়িতে স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। সন্তানদের মধ্যে তিনজন সুস্থ থাকলেও বিরল রোগে আক্রান্ত দুই সন্তানকে নিয়ে পড়েছেন বিপদে। সামর্থ না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।
ফখরুল ইসলাম জানান, তিন-চার বছর বয়সে প্রথমে ছেলে সালেকিনের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখতে পান। একপর্যায়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মেয়ে রিমার শরীর ও মুখেও প্রথম অবস্থায় সালেকিনের মতোই কিছু সাদা সাদা দাগ ছিল। ধীরে ধীরে তা সমস্ত মুখে ও শরীরে ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে তা কালো বর্ণ ধারণ করে । এখন তারা আলোতে ঠিকমতো তাকাতে পারে না। এই অবস্থায় ঘরের বাইরে তাদের চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুজনের কেউই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। এই দুইজনের পিতা জানান অভাবের সংসার। চিকিৎসার সামর্থ নেই। নিজেদের চোখের সামনে ছেলেমেয়ে ব্যাথায় কান্নাকাটি করে। চোখের সামনে সন্তানের এ কষ্ট সহ্য করা খুব কঠিন।
অসুস্থ রিমা জানায়, তারা সুস্থ মানুষের মতো বাঁচতে চায়। তাদের বিশ^াস কেউ তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসবে। তারা সুস্থ হবে। বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবে। নতুন করে পৃথিবীটাকে দেখবে। সালেকিন আর রিমার মা শিরি বেগম জানান, ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে ছসলেকিন দ্বিতীয় এবং রিমা তৃতীয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই তাদের পিতা। কৃষিকাজ করে আটজনের সংসার চালানোই তার পক্ষে কঠিন। এ অবস্থায় সন্তানদের চিকিৎসা করানোটা অসম্ভব। নিজস্ব কোনো জমি জমাও নেই যে বিক্রি করে চিকিৎসা করাবেন। প্রথমদিকে স্থানীয় কবিরাজ দিয়েই চিকিৎসা করান। কিন্তু কবিরাজের চিকিৎসায় কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমানে ছেলের মুখমন্ডল পঁেচগলে বিকৃত হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে পরিবারের ছোট ছেলে আড়াই বছর বয়সের শিশু সাদেকুর রহমানেরও দেখা দিয়েছে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। সম্প্রতি স্থানীয়দের সহযোগিতায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সঠিকভাবে রোগটি শনাক্ত করতে পারেনি তাই ঢাকা অথবা দেশের বাহিরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সৈয়দ শওকত আলী সাংবাদিকদের জানান, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়। ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে ডিএনএ নষ্ট হয়ে ক্যানসার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারণা করছেন রোগটি ঢবৎড়ফবৎসধ চরমসবহঃড়ংধস হতে পারে। এটি একটি বিরল ধরনের রোগ। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি।