আট ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ ডিসেম্বর ২০১৫, ৭:২৮ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
আট ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস।
দুই ডিসেম্বর রাতে মৌলভীবাজারের পূর্ব সীমান্তের কাছাকাছি শমসেরনগর বিমানবন্দর ও চাতলাপুর বিওপিতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ শুরু হয়। তীব্র আক্রমণের মুখে পাক সেনারা শমসেরনগরে টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে ফিরে আসে।
মৌলভীবাজারে ছিল পাক সেনাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশ্যে ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে কালেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থান নেয়। এখানে বড়টিলা নামকস্থানে পাক বাহিনীর সাথে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ১২৭ জন সেনা নিহত হয়।
৫ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে পড়তে শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধ করতে তারা ব্যর্থ হতে থাকে। এঅঞ্চলের পরাজিত পাকিস্থানী সৈন্যরা তখন সিলেট অভিমূখে পালাতে শুরু করে। এসময় তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বহু সাধারণ মানুষ নিহত ও জখম হয়। প্রচ- যুদ্ধ হয় শহরতলির সালামীটিলা, পাহাড় বর্ষিজুরা ও শমসেরনগর রোডে।
ঐদিনই পাকবাহিনীরা পিছু হটে মৌলভীবাজার ছেড়ে সিলেটে যাওয়ার পথে তারা শেরপুরে অবস্থান নেয়। পরে অবস্থান নিরাপদ নয় মনে করে সিলেট চলে যায়। এই ঘাতক বাহিনীর পিছু হটার ফলে ৮ ডিসেম্বর পুরো মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত হয় এবং আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা।
মৌলভীবাজারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখা ছিলো ১৪৭০ জন। এরমধ্যে সংগঠক ছিলেন ২ শতাধিক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সাংসদ ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান ৮ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করে পূর্বদিককে জানান, মৌলভীবাজার মুক্ত করতে ১ ডিসেম্বর আমরা মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। চাতলাপুর বিওপিতে বসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আক্রমণের সময় ও টার্গেট নির্ধারণ করি। শমসেরনগর বিমানবন্দর, চাতলাপুর বিওপি ও শমসেরনগর ডাক বাংলো এই তিনটি স্থান ছিলো আমাদের আক্রমণের টার্গেট। কারণ ওই স্থানগুলোতেই ছিলো পাক বাহিনীর আস্তানা। আমার সঙ্গে ১৭টি কোম্পানী নিয়ে রাজনগর হয়ে মৌলভীবাজার আক্রমণের জন্য অগ্রসর হই। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শমসেরনগর রোড দিয়ে অগ্রসর হয়। ৩ ডিসেম্বর আমরা এই তিনটি স্থান শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হই। ৪ তারিখ শমসেরনগর অবস্থান করি এবং ৫ তারিখ আক্রমণ করি মুন্সীবাজার। এখানে ডক ফাইট যুদ্ধ হয় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে। ওইদিনই পাকিস্থানী ওই এলাকায় পরাজয় বরণ করে।
তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর রাতে মৌলভীবাজার আক্রমণ করলে ঐদিনই মৌলভীবাজার মুক্ত হয়ে যায়। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের বাংলো ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি ৮ই ডিসেম্বর সকালে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জামাল উদ্দিন জানান, দিবসটি উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় পতাকা উত্তোলন, ১১টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। #