শেষ হলো মণিপুরীদের ১৭৩তম মহারাসলীলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৪২ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস, মাধবপুর থেকে ফিরে ::
মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ, সকাল থেকে সন্ধ্যা রাখাল নৃত্য, নট সংকীর্তন, গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের জোড়াম-প ও আদমপুরের সানাঠাকুর ম-পে রাতভর রাঁধাকৃষ্ণের এই রাস অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে রাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়টা একটু বিরুপ। উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদী তৎপরতা আমাদেরকে অসহিষ্ণুতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের দেশকেও তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। তাই আমাদের সবাইকে আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মধ্যে যে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ ও মূল্যবোধ রয়েছে তাকে নিয়ে অসম শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
এবারই প্রথমবারের মতো মৈতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকেরা আদমপুর এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর (শিববাজার) জোড়াম-প প্রাঙ্গণে মণিপুরীরা মহারাসলীলার আয়োজন করে। মাধবপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া ও আদমপুরে মৈতৈ সম্প্রদায় এই রাসের আয়োজন করে।
পৃথক দুটি স্থানেই মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশী-বিদেশী পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞাণী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে গোটা উৎসব অঙ্গন।
শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুকরণ উৎসব উপলক্ষে বুধবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি কদম গাছের তলে রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা) অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নট সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ বুধবার রাত ১২টা থেকে জোড়াম-পে শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। এই মহারাসলীলা কয়েক ঘন্টাব্যাপী চলতে চলতে বৃহষ্পতিবার ঊষালগ্ন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা ও বিভিন্ন রকম খাবার সামগ্রীর দোকান স্থান পায় অনুষ্ঠানস্থলের আশে পাশে। খই, মুড়ি, খেলনা, নাগরদোলা, বাঁশের বাঁশি, মণিপুরী তাঁতের বিভিন্ন সামগ্রী ইত্যাদি স্থান পায়। মহারাসলীলায় এসে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন খুব খুশী। মহারাসলীলাকে কেন্দ্র করে তিন স্তরে প্রায় ৬০জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক ডিউটি পালন করেছে।
রাসলীলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এডভোকেট চাঁদমুরারী সিংহের সভাপতিত্বে গুণীজন সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান অপরুপ চৌধুরী, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য উজ্জল বিকাশ দত্ত, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব যুগ্ম সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি প্রণীত রঞ্জন দেব নাথ প্রমুখ।
এদিকে রাসলীলা আয়োজক কমিটি মুক্তিযুদ্ধে শ্রী ব্রজকিশোর সিংহ, সমাজসেবায় শ্রী রাঁধাকান্ত সিংহ ও শিক্ষকতায় অবদান রাখায় শ্রী প্রফুল্ল কুমার সিংহকে সম্মাননা প্রদান করে।