কেন হাসে নূর হোসেন ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০১৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
এ মূহুর্তে দেশজুড়ে আলোচিত কয়েকটি ঘটনার মধ্যে একটি হলো কেন হাসে নূর হোসেন ? তাঁর হাসিটি আবার মুচকি। ক্ষমতাধর নয়, বিজ্ঞের হাসি বলা যায়। হাসির আসল রহস্যটা কি কেউ বুঝতে পারছেন না। কেউ বলছেন মামলায় কি সিদ্ধান্ত হবে সে আগাম জেনে গেছে। আবার কেউ বলছেন ঘটনাটি আড়াল হয়ে গেছে এই ভেবে সে হাসছে। তবে তার মৃত্যুদ- যে অতি সন্নিকটে এটা ভেবে হয়তো সে হাসছে না। তাহলে কেন হাসে নূর হোসেন এই প্রশ্নটি এখন সবার মুখে মুখে।
আদালতে যেদিন তাঁকে তোলা হলো সেদিন সবাই উদ্বিগ্ন কিন্তু নূর হোসেন হাসে। গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশনের ক্যামেরাগুলো তখন তাঁর হাসিটিই দেশজুড়ে প্রচার করছে। দুএকটি টেলিভিশনতো অন্য খবর বাদ দিয়ে তাঁর হাসির রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যাহোক হাসতে হাসতে সে বিদায় নেয় আদালত পাড়া থেকে। তারপর কারাগারে। অনেকের প্রশ্ন তাহলে কি নূর হোসেন কারাগারে বসেও হাসছে। কোন সংজ্ঞা, যুক্তি, তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনাই এই হাসির মূল রহস্য বের করতে পারে নি।
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম আদালতের বাইরে গণমাধ্যমকে জানান, নূর হোসেন ঘটনার আদিঅন্ত বলতে চায়। তাই তাঁকে রিমান্ডে আনা হউক। কিন্তু ঘটে তাঁর উল্টো। পুলিশ বলে রিমান্ড প্রয়োজন নাই। তাহলে কি নূর হোসেন কিছু বলতে পারছে না বলেই হাসছে। তাহলে কি সে নির্দোষ না মতিভ্রম ঘটেছে তাঁর। রায়ে তাঁর যদি মৃত্যুদ- হয় তাহলে কি সে খুশী। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই খুঁজছে তাঁর হাসির রহস্য।
তাঁর জীবন খাতায় এমন কোন কূ-কর্ম নাই যা সে করে নাই। তাঁকে রিমান্ডে নিতে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষসহ দেশজুড়ে একটি মৌন সমর্থন তৈরী হয়েছে। মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করছে এলাকাবাসী। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে এসব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু পুলিশতো অবিচল তাদের সিদ্ধান্তে। তাহলে কি পেছনে থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে ? নানা প্রশ্ন নানা জিজ্ঞাসা প্রতিদিন মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।
তবে কি নূর হোসেন বেঁচে যাবে নৃশংস এই হত্যাকা-ের দায় থেকে, অভিযোগ থেকে। নাকি অভিযুক্তরা তাঁকে আশ্বাস দিয়েছে বেঁচে যাওয়ার। নাকি বিচারে তার মৃত্যুদ- হবে না এধরনের একটি আশ্বাস পেয়েছে সে। কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার হাসির গূঢ় তথ্য নিয়ে।
তিনি ছিলেন বাসের হেলপার। তারপর তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বদৌলতে হয়ে ওঠেন দাবার ঘুঁটি। যে দলই ক্ষমতায় এসেছে তাঁকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটা হয়েছে। আশির দশকে তৎকালীন জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতি নেতা নাসিম ওসমানের হাত ধরে রাজনীতিতে তার প্রবেশ। একসময় তিনি পরিবহন নেতা বনে যান। বিএনপি সরকারের সময়েই নারায়ণগঞ্জের বালু মহাল ও মাদক ব্যবসার সা¤্রাজ্য গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি হয়ে যান সাংসদ শামীম ওসমানের ডান হাত। ২০০১ সালের পর বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি উধাও হয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
২০০৯ সালে শামীম ওসমান ও নূর হোসেন গুরু শিষ্যের মিলন ঘটে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তারপর সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি হন।
তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে সাত খুনের দুই মামলাসহ ১১টি মামলা। তবুও হাসে নূর হোসেন। যেভাবে আগের মামলা থেকে সে নিষ্কৃতি পেয়েছিলো সেভাবেই কি এই মামলা থেকে সে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে। এটাই এখন প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাহলে কি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের রিমান্ড আবেদন এই মামলায় স্থান পাবে না ? তাহলে কি এঘটনার পেছনের রাঘব বোয়ালরা এভাবেই পার পেয়ে যাবেন ? তাহলে কি সময়ে সময়ে খুন-খারাবি করে এভাবেই হাসবে নূর হোসেনরা ? সত্য প্রকাশ কি হবে না ? দেশবাসী কি জানবে না খুনের পেছনের কাহিনী ? তাহলে কি নতুন করে নূর হোসেনরা উৎসাহিত হবে মানবতা বিবর্জিত এসব কর্মকা-ে ? এমন হাজারো প্রশ্ন ক্ষত-বিক্ষত করছে এদেশের সাধারণ মানুষকে।
এদেশে এরশাদ সিকদারের বিচার হয়েছে। প্রতিদিন খুনীদের বিচার হচ্ছে, সাজা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা অবশ্যই উন্মোচিত হবে। নূর হোসেনরা পার পাবে না। একসময় তাদের হাসি থামবে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে। এটাই আশা দেশের সর্বস্তরের শান্তিকামী মানুষের। ১৭.১১.১৫