দুই শিশু হত্যার রায় ও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ নভেম্বর ২০১৫, ১১:০০ পূর্বাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
দেশের আলোচিত দুই শিশু সিলেটের সামিউল আলম রাজন (১৩) ও খুলনার রাকিব হাওলাদার (১২) হত্যাকা-ের রায়ের মধ্যদিয়ে আবারও প্রমাণ হলো দেশে আইনের শাসন আছে। সিলেটের মামলাটি ১৬ বিচারিক কার্যদিবসে এবং খুলনার মামলাটি ১১ বিচারিক কার্যদিবসে রায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো। সিলেটের ঘটনার পর প্রায় ৪ মাস ও খুলনার ঘটনার সময় ৩ মাস ৫ দিন। এতো কম সময়ে দেশে কোন মামলার রায় বিরল ঘটনা এবং এই রায়টি ইতিহাসের অংশ হিসেবে স্থান পেলো।
পৃথক দুটি মামলায় ৬ জনকে ফাঁসি, ৪ জনকে খালাস, একজনকে যাবজ্জীবন, ৩ জনকে ৭ বছরের ও ২ জনকে এক বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। দ-প্রাপ্ত প্রত্যেক আসামীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাসের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়।
এমামলার রায় হওয়ার পর অ্যাটর্নী জেনারেল, শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন, আইনজীবীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা মতামত দিয়েছেন, এই রায়ের ফলে সাধারণ মানুষের দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা মজবুত হবে। এছাড়া এধরনের অপরাধও কমে আসবে বলে তাদের ধারণা।
দ-প্রাপ্ত আসামীদের হয়তো উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নৃশংস এই দুই হত্যাকা-ের রায়ের কোন পরিবর্তন দেখতে চায় না এদেশের সাধারণ মানুষ। রায়টি দ্রুত সময়ে সম্পন্ন হওয়ায় দেশের মানুষ এটিকে সরকারের সদিচ্ছা, আইনজীবী ও বিচারকদের ইতিবাচক মনোভাবকে সাধুবাদ জানিয়ে রায়ের দ্রুত কার্যকারিতা দাবি করেছেন। একই সাথে নির্যাতিতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
সিলেট মহানগর দায়রা ও জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিছবাউদ্দিন সিরাজ গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ৭ দিনের মধ্যে রায়ের নথিপত্র হাইকোর্টে যাবে এবং এরপর আপিল বিভাগে রায়টির কপি যাবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন কাছাকাছি সময়েই এই আলোচিত যুগান্তকারী দুই মামলার রায় ঘোষিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে সদ্য সমাপ্ত নেদারল্যান্ডস সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার দেশকে আমি ভালবাসি। বাংলাদেশকে অনিরাপদ প্রমাণ করার জন্য একটি গোষ্ঠী ‘আর্টিফিশিয়ালি’ এসব গুপ্তহত্যা ও হামলা চালাচ্ছে। তিনি বিএনপি জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়ায় কি ঘটছে, লিবিয়ায় কি ঘটছে, ইরাকে কি ঘটছে ? তা অবশ্যই আপনারা জানেন। সেসব দেশে যা হচ্ছে বাংলাদেশেও এরা সে অবস্থার সৃষ্টি করতে চায়।
তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্থান, পাকিস্থান, সিরিয়া, ইরাক ইত্যাদি দেশের মতো অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা করছে। দেশে পরিকল্পিত হত্যাকা- চালানো হচ্ছে এবং একাজে মদদ দিচ্ছে বাইরের দেশগুলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজনীতি এখন এতো দৈন্যদশায় পড়ে নাই যে আমাকে আলোচনার জন্য একজন খুনীর সাথে সংলাপে বসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যদি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়েন তবেই আলোচনার সুযোগ তৈরী হতে পারে।
দেশব্যাপী ব্লগার, প্রকাশক হত্যাকা-ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে এসব কারা করছে। দেশকে আইএস কারা বানাতে চায়। তাই আপনারাসহ (সাংবাদিকরা) সবাইকে সাহস রাখতে হবে। আমি ১৯৮১ সাল থেকে খুনের তালিকায় আছি। কোথাও সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তাদের ধরতে সবার সহযোগিতা চাই। তবে অবশ্যই সব খুনের বিচার হবে।
তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনে লিখার বিষয়ে বলেন, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এধরনের লেখা যেনো না হয়। আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ। ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থ এই নয় যে ধর্মহীনতা। কেউ ধর্ম মানবে না এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু অন্যের ধর্মে আঘাত দেওয়া যাবে না। বিকৃত লেখা মানবিক গুণ নয়।