কমলগঞ্জের জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ॥ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ নভেম্বর ২০১৫, ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস, জগন্নাথপুর থেকে ফিরে:
ঘরের চাল নেই, দেয়াল নেই, শ্রেণিকক্ষ নেই, বসার বেঞ্চ নেই, নেই কোন পড়াশুনার পরিবেশ। তবুও গত ১৮ বছর ধরে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। জরাজীর্ণ দুইটি কক্ষেই অফিসের কার্যক্রম ও ১৬০জন শিক্ষার্থীর পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এদৃশ্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ সালে ৩৩ শতক জমির উপর গড়ে ওঠে জগন্নাথপুর রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। জগনপাশা, জগন্নাথপুর ও প্রতাপী এই তিন গ্রামের শিক্ষার্থীর পড়াশুনার লক্ষ্যে জগন্নাথপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী মরহুম নসির মিয়া এই ভূমি দান করেন। এরপর এখানে গড়ে ওঠে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয় ঘর। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৪জন শিক্ষক পাঠদান করে থাকেন।
এদিকে ১৯৯৭ সালে ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়ের ৪টি কক্ষের টিনের চাল, দেয়াল, দরজা, জানালা ভেঙে উড়ে যায়। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়েও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া ও অফিসের কার্যক্রম জরাজীর্ণ দুইটি কক্ষেই চালিয়ে আসছেন। এই দুইটি কক্ষও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টিতে চালের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে। ঝড়-তুফানেতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের মনে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আরাধনা রাণী দত্ত, গৌরী দেব ও পূর্ণা পাল পূর্বদিককে জানান, শত আবেদন-নিবেদন করেও ভবনটি সংষ্কার বা পূন:নির্মাণ করানো যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন লেখাপড়ার পরিবেশ নাই। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি টয়লেট নেই এবং বিদ্যুৎ ও নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে বলে তারা জানান।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। কিন্তু গত দুই বছরেও বিদ্যালয়টি অবহেলিতই রয়ে গেছে। কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কোথাও। ভবনটি দেখলে কোন বিদ্যালয় মনে হয় না। দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। যখন তখন ধ্বসে পড়ে বড় ধরনের দুঘর্টনা ঘটতে পারে। শ্রেণী কক্ষের অভাব আর জরাজীর্ণতার ভয়ে অনেক শিশুর বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মবশ্বির আলী পূর্বদিককে জানান, বিদ্যালয়টির দীর্ঘদিনের সমস্যার কারণে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ে পড়াশুনা ব্যাহত হওয়াসহ নানা সমস্যা কথা জানালেন শিক্ষকরা। এই সমস্যা সমাধানে জরুরী ভিত্তিতে শ্রেণি কক্ষ নির্মাণসহ বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন প্রধান শিক্ষক।
এবিষয়ে রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার হোসেন বদরুল পূর্বদিককে জানান, বিদ্যালয়ের সংষ্কারকাজ করানোর জন্য ইতিমধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবনসহ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন বালা পূর্বদিককে জানান, সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। শীঘ্রই যাতে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় অতি গুরুত্ব সহকারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। #