উপ-নির্বাচনের টিকেট
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০১৫, ১:০৬ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক রিপোর্ট ::
সবারই দৃষ্টি এখন ‘টিকেট’। কে পাচ্ছেন উপ-নির্বাচনের টিকেট। এটিই এখন সাধারণ মানুষ ও ভোটার থেকে শুরু করে সবার মুখে মুখে। হউক সে ভোটার বা ভোটার নয় এমন উৎসুক মানুষও জানতে চায় কে পাচ্ছেন এই সোনার হরিণ ‘টিকেট’।
দলীয় বৈঠক থেকে শুরু করে শহরের সব আড্ডায়ই এখন প্রধান বিষয় উপ-নির্বাচন। মৌলভীবাজার ও রাজনগর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ, গ্রাম্য বৈঠক, চা-স্টল, গ্রাম্য বাজার এখন টিকেট জ্বরে ভুগছে।
তবে নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, জামায়াতে ইসলামী এসব দলের কোন কার্যক্রম ও প্রচারণা মাঠে এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তাই সবার দৃষ্টি এখন ক্ষমতাসীন দলের উপর। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের পাতি নেতা, মাঝারি নেতা, গ্রাম্য মাতব্বর, ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানরা এখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এদিকে নির্বাচনে আবার ক্ষমতাসীন দলের আভ্যন্তরীন গ্রুপিংটি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই গ্রুপ পর্যায়ে নেতারা গোপনীয়তা বজায় রেখে যে যার মতো কর্মী ও ভোটারদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আবার স্থানীয় যে নেতার জাতীয় নেতার সাথে দহরম-মহরম আছে সে সব নেতারা কদর পাচ্ছেন বেশি। কেউ কেউ ইতিমধ্যে জাতীয় নেতাদের সাথে দেখা করে ও এসেছেন। কর্মী ও সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে এরা আবার স্বান্তনার সুরে বলছেন যে, আমাদেরই গ্রুপের প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন।
মৌলভীবাজার-৩ এ আসনটির নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মৃত্যুর পর গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের মতামত পর্যবেক্ষণ করছে সাপ্তাহিক পূর্বদিক। চা স্টল থেকে শুরু করে ব্যবসা কেন্দ্র, বাজার, জন সমাগমস্থল ইত্যাদি জায়গায় জরীপ চালানো হয়েছে পত্রিকার পক্ষ থেকে। এই জরীপ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।
জরীপ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে কতটুকু এগিয়ে আছেন সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। তাই তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে মিশ্র কথাবার্তা রয়েছে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে। তবে দলের প্রধানের সুনজরে তিনি আছেন এটা পরিষ্কার।
সম্ভাব্য প্রার্থী পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিম (বি করিম)। তিনি দলের ক্রান্তিলগ্নে পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দলের পক্ষে কাজ করেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে প্রার্থী হয়েও আবার দলের সিদ্ধান্তেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। স্থানীয়ভাবে তার নাম মানুষের মুখে মুখে থাকলেও তার ভোটারদের সাথে সম্পৃক্ততা তেমন নেই। কারণ তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ছিলেন না। দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সিদ্ধান্ত তার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দা সায়রা মহসীন। তিনি প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মিনী। রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় না থাকলেও তার স্বামীর রাজনীতিতে তার ইতিবাচক ভূমিকা সর্বজনের জানা। বর্তমান সরকার নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রীর সহধর্মিনী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীসহ এই আসনের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে একটা ‘সিমপ্যাথি’ কাজ করছে। তাকে মনোনয়ন দিলে ‘সিমপ্যাথি’ ভোটও তার পক্ষে যাবে। এক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তিনি অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা।
সম্ভাব্য প্রার্থী নেছার আহমদ। তিনি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র থেকে শুরু করে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে আসছেন। তার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। যদি দল তাকে মূল্যায়ন করে এবং নেত্রীর সুনজর তার উপর থাকে তাহলে হয়তো তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা ভোটারদের।
সম্ভাব্য প্রার্থী মো. কামাল হোসেন। তিনি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি। তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে তার একটি সুনাম রয়েছে জেলা জুড়ে। স্থানীয়সহ জাতীয় পর্যায়ে দলের নীতিনির্ধারক অনেকের সাথেই তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে তারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভোটাররা মনে করছেন।
এদিকে প্রবাসী যারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা নিজেদের নাম প্রচার করতেই এটা করছেন বলে ভোটারদের একটা বড় অংশ মনে করছেন।
তবে জরীপে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যে বিষয়টি উঠে এসেছে তাহলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কারণ সৈয়দ মহসীন আলীকে পূর্ণমন্ত্রী তিনিই করেছিলেন। তাই এক্ষেত্রে দুজনের নাম বেশি করে জরীপে এসেছে। এরা হলেন, পুলিশের সাবেক এআইজি সৈয়দ বজলুল করিম (বি করিম) ও প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মিনী সৈয়দা সায়রা মহসীন।
পুনশ্চ: জরীপে যা-ই পাওয়া যাক না কেন ? আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়ন পাওয়ার দিন পর্যন্ত। তবে সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা মনে করেন, যিনিই মনোনয়ন পান ও নির্বাচিত হোন। তিনি এ আসনের মানুষের সুখ ও দুঃখে কাজ করে যাবেন।