বুধবার বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী
স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০১৫, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক রিপোর্ট ::
চারদিকে সবুজ আর সবুজ। মনে হবে সবুজের রাজ্যে হাঁটছেন আর বিচরণ করছেন। সারাটা এলাকা জুড়ে উষ্ণতা আর ঠা-া শীতল হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যায়। মনে প্রাণে আসে এক না বলা অনুভূতি। থরে থরে সাজিয়ে থাকা চা পাতা ও সবুজ গালিচার মাঝখানে শুয়ে আছেন বাংলার গর্ব, বাঙালি জাতির গর্ব, লক্ষ কোটি জনতার প্রাণের বীর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান।
অযতœ অবহেলায় লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে আছে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি। একাত্তর সালের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তের চৌকি এলাকায় তিনি শহীদ হন।
তার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ ও একটি বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণীও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এগুলো দেখার জন্য কোন কর্তৃপক্ষ নেই, নেই কোন সংস্কার, প্রচারণা কিংবা এটিকে সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা। অযতœ, অবহেলায় পড়ে আছে দিনের পর দিন। এটি কমলগঞ্জ না শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ? এবিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায় পর্যটকরা এখানে আসতে পারে না। শুধুমাত্র তার মৃত্যুদিবসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে কিছু লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা করা হয়।
তাই এই মৃত্যুবার্ষিকীতে পর্যটক, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধকে ঘিরে একটি পর্যটন এলাকা নির্মাণ, পাঠ্যপুস্তকে তার বীরত্বের কাহিনী লিপিবদ্ধসহ পর্যটন নগরী হিসেবে এই স্থানটিকে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের অককাশ আলি ও কায়সুননেছার সন্তান। তিনি একাত্তর সালে কিছু সময়ের জন্য আনসার বাহিনীতে চাকুরী করেন এবং একই বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি তৎকালীন এক নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক পদে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ হলেও এগুলো ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। ১১টি সেক্টরের মাঝে ৪ নং সেক্টরের মেজর জেনারেল সিআর দত্তের অধীনে ছিল ত্রিপুরার কমলপুর সাব সেক্টর। মেজর কাইয়ুম চৌধুরীর রানার ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ধলই সীমান্তে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহী মেজর কাইয়ুম চৌধুরীর নির্দেশে হামিদুর রহমান একাত্তর সালের এই দিনে দেশপ্রেম, সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে এবং হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি শত্রুমুক্ত করতে দখলে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদার বাহিনীর দুইটি লাইট মেশিন গানের উপর। পড়ার সাথে সাথে তিনি শহীদ হন। এরপর মুক্তিবাহিনী ধলই ঘাঁটিটি দখল করে নেয়।
বিগত চার দলীয় জোর সরকার আমলে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান ধলই সীমান্তে হামিদুরের নিহতের স্থানটিতে ২০০৩ সালের ৩০ এপ্রিল স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে ওখানেই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। এরপর স্মৃতিসৌধের সম্মুখে ১৯৯২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ১৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সৌজন্যে একটি বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণীও নির্মাণ করা হয়।
বাংলাদেশ রাইফেলস এর নিজ উদ্যোগে নির্মিত স্মৃতিফলকে ভুলক্রমে লিখা হয়েছিল শ্রীমঙ্গল উপজেলার ধলই সীমান্ত। সেই থেকে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে কমলগঞ্জ উপজেলাধীন মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই সীমান্তকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ধলই সীমান্ত বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধলই সীমান্তটি কমলগঞ্জ উপজেলাধীন। এই ভুল সংশোধন করার ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি সবার।
হামিদুরের সহযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাজ্জাদুর রহমান এখনও বেঁচে আছেন মৌলভীবাজারের শমসেরনগরস্থ সিংরাউলি গ্রামের বাড়িতে। ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আক্ষেপ করে বলেন, হামিদুরের গ্রামের বাড়িতে স্কুল কলেজসহ অনেক কিছু হলেও এখানে সরকার কিছুই করে নি। তাই তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, এই গৌরবোজ্জল আত্মাহুতির স্থানটিকে রক্ষনাবেক্ষণ করে জাঁকজমকপূর্ণভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হউক। এবং কমলগঞ্জের যে অডিটোরিয়াম আছে এই অডিটোরিয়ামটি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়।
কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো: কামরুজ্জামান বলেন, সারা বছর সার্বজনীনভাবে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার সাথে দেখার জন্য একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ তার য্দ্ধুবিজড়িত স্থানটি যেনো সংরক্ষণ করা হয়।