পৌরসভা নির্বাচন
কুলাউড়ায় আ.লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে তিন নেতা মরিয়া!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
নাজমুল ইসলাম
পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে সরকারদলীয় তিন নেতা দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিন পৌরশহর ঘুরে দেখা যায়, সম্ভাব্য আ.লীগের মেয়র প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ডিজিটাল ব্যানার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলেছে শহরের অলিগলি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এ তিন সরকার দলীয় আ.লীগের প্রার্থী দাবিদার প্রতিদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানামুখী তৎপরতাসহ দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিরবে যোগাযোগ রা করে চলছেন। তাদের এমন তৎপরতার ফলে ভোটারদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মনোনয়ন যুদ্ধে তিন নেতার মধ্যে কে পাবেন দলীয় নৌকা প্রতীক এ নিয়ে পৌরশহরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কৌতুহলী আলোচনা চলছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে ১৮৫টি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে সেই তালিকায় কুলাউড়া পৌরসভাও রয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকার ঘোষণা দিয়েছে এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুলাউড়ায় আ.লীগের সম্ভাব্য দলীয় মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা আ.লীগের অন্যতম সদস্য জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা আলহাজ শফি আলম ইউনুছ, আ.লীগের সহযোগী সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণ ভোটার মনে করছেন ভোটের আগে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে যিনি জয়ী হবেন তিনিই এগিয়ে থাকবেন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরশহরের পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে এবং চায়ের দোকানে কে হবেন সরকার দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মালিক এ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে।
এ তিন সম্ভাব্য প্রার্থী ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানা উন্নয়নের কথা শোনাচ্ছেন। এছাড়াও রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহ, বাল্যবিয়ে এবং মাদকমুক্ত পৌরসভাসহ নানা ধরনের জনকল্যাণমুখী কাজের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে।
আ.লীগ দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী দাবিদার এ তিন প্রার্থী নিজ দলের মনোনয়ন লাভের আশায় এলাকায় গণসংযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময় প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নির্বাচন ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে শেষ পর্যন্ত কার মাথায় উঠবে দলীয় মনোনয়নের মুকুট সেটিই দেখার অপোয় কুলাউড়া পৌরবাসী।
সম্ভাব্য আ.লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী দাবিদার একেএম শফি আহমদ সলমান এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি আ.লীগের রাজনীতি করে কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আ.লীগের উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ দিন থেকে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজনীতি করে যাচ্ছেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দলের নির্দেশ মেনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছিলেন। দলের একাধিক নেতা কর্মীরা তাকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তাই তিনি সম্ভাব্য আ.লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কুলাউড়া উপজেলা আ.লীগের অন্যতম সদস্য ও জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা আলহাজ শফি আলম ইউনুছ জানান, দলের তৃনমূল নেতাকর্মীরা তাকে প্রার্থী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাই তিনি পৌর নির্বাচনে সম্ভাব্য আ.লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে শহরের ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ২৬শ ভোট পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন পৌরশহরের সচেতন মহলকে। দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আশ্বাস পেয়ে নিজেকে আ.লীগের প্রার্থী দাবি করছি। তিনি এবার গতবারের চেয়ে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে পৌর মেয়র হিসেবে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
অপরদিকে আ.লীগের সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী দাবিদার আ.লীগের সহযোগী সংগঠন জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, ছাত্র থাকা অবস্থায় শেখ রাসেল শিশু সংগঠনের সক্রিয় সদস্য থেকে শুরু করে বর্তমানে আ.লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী শ্রমিকলীগের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রাজনীতি করে যাচ্ছি।
তিনি মনে করেন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন তিনিই পাবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন থেকে বিরত থাকবেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন দল যখন মনোনয়নের সিদ্বান্ত নেবে তখন তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, দলীয় ভিত্তিতে এবার পৌর নির্বাচন হবে। জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতির মাধ্যমে আলোচনা করেই দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে উপজেলা কমিটির কোন মতা নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা কমিটিকে যে নির্দেশ দেবে সেটি উপজেলা কমিটি মেনে নিতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্থীর পে সমর্থন দিয়ে অপর প্রার্থীরা তাদের প্রার্থীতা দলের স্বার্থে প্রত্যাহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবেন বলে তিনি আশাবাদী।