শত শত জনতার জুতা প্রদর্শন ও ফাঁসির দাবি
রাজন হত্যার প্রধান আসামী কামরুল ৩৫ জনের স্বাক্ষ্য পুনরায় শুনতে চায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০১৫, ১:০৪ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
শত শত জনতার জুতা প্রদর্শনের মধ্যে রোববার সকাল ৯টায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয় রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামী কামরুলকে। এসময় উপস্থিত জনতা কামরুলকে উদ্দেশ্য করে তীরষ্কার করে এবং তার ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে।
এদিকে আজ কামরুলসহ গ্রেফতারকৃত অন্য ১০ আসামীকেও আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদারসহ ৩জন দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে স্বাক্ষ্য দেন। আদালতে নির্বাক কামরুল এক সময় আবেদন করে, তার অনুপস্থিতিতে যে ৩৫জন স্বাক্ষী দিয়েছে। তাই পুনরায় তার উপস্থিতে স্বাক্ষ্য নেওয়া হউক।
এই মামলায় নয় কার্যদিবসে ৩৫জনের স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা বরখাস্তকৃত (ওসি তদন্ত) আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুল আমিন, শামীম আকঞ্জি, সোহেলরানা ও সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহাদেব বাঁচাড়। গত বুধবার সিলেট মহানগর হাকিম মো সাহেদুল করিম, আনোয়ারুল হক, ওসমানী মেডিক্যাল করেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা ইসলাম ও জালালাবাদ থানার পুলিশ সদস্য ফয়ছল আহমদ। গত মঙ্গলবার স্বাক্ষ্য দেন, জালালাবাদ থানার পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন, মনির আহমদ, মাইক্রো চালক আব্দুল মান্নান ও ওয়ার্কশপ মালিক সুদীপ কপালি। গত রোববার স্বাক্ষ্য দেন, পশ্চিম জাঙ্গাইলের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক, কুমারগাঁওয়ের বেলাল আহমদ ও দকির গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান। ৮ অক্টোবর স্বাক্ষ্য দেন কুমারগাঁওয়ের লুৎফুর রহমান, বাবুল মিয়া, কাচা মিয়া ও পূর্ব জাঙ্গাইলের কচি। ৭ অক্টোবর বাদেআলীর ইশতিয়াক আহমদ রায়হান, নিজামউদ্দিন, অনন্তপুরের আব্দুজ জাহির মেম্বার, শেখপাড়ার পঙকি মিয়া স্বাক্ষ্য দেন। ৪ অক্টোবর রাজনের মা লুবনা বেগম, জিয়াউল হক, আল আমিন ও মাসুক মিয়া। ১ অক্টোবর রাজনের বাবা আজিজুর রহমান, মামলার বাদী জালালাবাদ থানার বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষ্য দেন।
মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামীরা হলো, কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিদ আলম, আলী হায়দার, শামীম আহমদ (পলাতক), তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমীন, দুলাল আহমদ, ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ জাকির ওরফে পাভেল ওরফে রাজু (পলাতক) ও আয়াজ আলী।
বহুল আলোচিত সামিউল ইসলাম রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামী কামরুল ইসলামকে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে আদালতে হাজির করার পর সিলেটের মহানগর হাকিম আনোয়ারুল হক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রোববার (১৮ অক্টোবর) মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রাখা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে ঢাকা থেকে আনার পর সিলেটের কতোয়ালি থানা হেফাজতে রাখা হয়।
সৌদিআরব থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাকে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় কড়া নিরাপত্তায় তাকে ঢাকা থেকে সড়কপথে সিলেট নিয়ে আসা হয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামী কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করলে সৌদি কতৃপক্ষ তাতে রাজী হয়। আসামী কামরুলকে আনতে গত সোমবার (১২ অক্টোবর) পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত সুপার মাহাবুবুল করিম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার এএফএফ নেজামউদ্দিন সৌদি আরবের রিয়াদে যান।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের শিশু সামিউল ইসলাম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর কালো টি-শার্ট পড়ে লাঠি দিয়ে রাজনকে কামরুলের পেটানোর ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী বিবেকবান মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় নিন্দার ঝড়।
কিন্তু ঘটনা টের পেয়ে কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। এঘটনায় সৌদিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তারা কামরুলকে আটক করে। এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে সৌদি পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে ঘটনার বিচার ও কামরুলকে ফিরিয়ে আনতে দেশব্যাপী মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হলে বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের মাধ্যমে জারি করে রেড নোটিশ। এঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে ২৪ জুলাই জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
ঘটনার পর গত ১৬ আগস্ট ১৩জনকে আসামি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর কামরুলসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১লা অক্টোবর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এই হত্যাকা-ের বিচার ইতিমধ্যে সিলেটের আদালতে শুরু হয়ে গত (১৪ অক্টোবর) পর্যন্ত ৩৫ জন জবানবন্দি দেয় আদালতে। এপর্যন্ত ১০ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক কামরুল, শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশিত হয়।