লাল দুর্গা পূজা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০১৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক রিপোর্ট ::
প্রায় দুইশ’ বছর ধরে মৌলভীবাজারের রাজনগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপমহাদেশের একমাত্র লাল দুর্গা পূজা। এখানে মূর্তির রঙ লাল বর্ণের যা দেশের অন্যান্য মূর্তির চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তিনদিনব্যাপী এই পূজোয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পূজা প্রাঙ্গন। হাজারোর্ধ্ব পাঠা এখানে বলি দেওয়া হয়।
রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও গ্রামে স্বর্গীয় সর্ব্বানন্দ দাশের বাড়িতে লাল বর্ণের এই দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রতিবছর। মূলত পারিবারিকভাবে প্রায় দুইশ’ বছর ধরে এই পূজা আয়োজন করা হলেও বর্তমানে এটা সার্বজনীন রুপ লাভ করেছে।
অষ্টমী ও নবমীর দিন লাল দুর্গা ম-পে দেবী দর্শন, মানত ও বলি দিতে নারী-পুরুষ, ছেলে বুড়ো, শিশুসহ হাজার হাজার ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের পদভারে মূখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে এসে কেউ বলি দিচ্ছেন, কেউ মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউ ভক্তি দিচ্ছেন। পূজা মন্ডপের আশপাশ এলাকা উলুধ্বনির শব্দে ভরে ওঠেছে। পূজাকে কেন্দ্র করে মেলায় ইত্যাদির দোকান বসে।
পূজা ম-পের এক কিলোমিটার এলাকার ভেতরে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এখানে ষষ্ঠী পূজোর মাধ্যমে শুরু হয়ে দশমীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। পূজোতে আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দর্শনার্থীরা মানত করে এখানে আসেন। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, মধ্যবয়সী, আবালবৃদ্ধবনিতা দর্শনার্থীর সমাগমে মুখরিত থাকে পূজো প্রাঙ্গন। সপ্তমী ও নবমীতে পাঠা ও মহিষ বলি দেওয়া হয়। উলুধ্বনি, মোমবাতি প্রজ্বলন, আবাহন, অধিবাস ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজোর সমাপ্তি ঘটে।
পূজোকে ঘিরে আয়োজন করা হয় মেলার। মেলাতে খেলনা ও খাবারের দোকান, মূর্তির দোকান, পোস্টারের দোকান, কাঁসার বাসন, কাঁচ-রেশমি চূড়ি, নাগরদোলা, ধর্মীয় গ্রন্থ, বাঙালি খাবার স্থান পায়। রথ দেখা ও কলা বেচার মতো আগত দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীরা দুটোরই স্বাদ পান। পূজো উপলক্ষে নবমী ও দশমীর দিনে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য থাকে। প্রতি বছরই এসময়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঢাকা, সিলেট ময়মনসিংহ বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসে দুইতিন দিন থেকে যান। অনেকেই আবার দিনে এসে দিনেই চলে যান।