শুক্রবার অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহাপুরুষ লালন শাহের তিরোধান দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০১৫, ১:৪৫ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস::
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। আমি অপার হয়ে বসে আছি কিংবা চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করবো কি, ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম তোমরা তারে বলবে কি ? এই গানগুলো কার রচিত। যে কাউকেই জিজ্ঞেস করলেই বলবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহাপুরুষ লালন সাঁইর গান। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৭৭৪ সালে এবং ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই গানগুলো এখন দেশের সঙ্গীত শিল্পীদের মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে টিন-এজদের মুখে মুখে। এর কারণ টেলিভিশনের রিয়ালিটি শো এর বদৌলতে দেশে এখন বাউল গানের জোয়ার বইছে। আর একারণে শিল্পীর কণ্ঠের গ-ি পেরিয়ে এখন বাউল গান দেশের সাধারণ মানুষের হ্নদয়ে স্থান করে নিয়েছে আত্মার খোরাক এই গানগুলো।
শুক্রবার পয়লা কার্তিক। বাউল স¤্রাট লালন শাহের ১২৫তম তিরোধান দিবস। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় লালন একাডেমী ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুরু হচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। প্রায় প্রতিদিনই থাকবে তার জীবনী, গান, আধ্যাত্মিকতা, দর্শন ইত্যাদি নিয়ে দেশ বরেণ্যদের আলোচনা সভা ও তার রচিত গান। উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে বসেছে মেলা। এউপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দিবসটিকে সাফল্যে ভরে দিতে লালন আখড়াবাড়িতে নেমেছে ভক্ত অনুরাগীদের ঢল। বাউল-সাধুরা একাডেমী ভবনের নিচতলাসহ মূল মঞ্চের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই আবার মরাকালী নদীর তীরে আশ্রয় নিয়েছেন। আখড়ায় এখন ঢাক-ঢোল আর খঞ্জনির তালে সমানে চলছে লালনের সুরে গান আর গান। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলছে এই আয়োজন।
লালনের ভক্ত ও সাধকরা বলেন, লালন শাহ সহজিয়া বা অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে দেহতত্ত্ব, ভাবতত্ত্ব, গুরুতত্ত্বের বাণী দিয়ে গান রচনা করে গেছেন। তাকে বিচার করার ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিকতা কম লোকের আছে। লালনের আদর্শের অনুকরণীয় বাউলরা মনে করেন, শুদ্ধ আত্মায় মুক্তি মেলে। আর একারণেই লালন রচিত বিভিন্ন তত্ত্বের গান গেয়ে আত্মাকে শুদ্ধ করতে সাধু সংঘে আসেন বাউলরা। আলাপ-আলোচনা, তত্ত্বগান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আবার ভাব-বিনিময় হয় গুরু-শিষ্যের।
লালন মাহের মাজারের খাদেম মহম্মদ আলী শাহ বলেন, ১২৯৭ বাংলা সনের ১লা কার্তিক (১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর) আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন ছেঁউড়িয়ায় মৃত্যুবরণ করার পর থেকেই এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আর উৎসবে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে প্রতিবছর।
তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানকে সফল ও নির্বিঘœ করতে ইতিমধ্যে আগত বাউলদের খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত, বিদেশী দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, মেলার প্রস্তুতি সম্পন্নসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি পুলিশি মোতায়েন করা হয়েছে। এই উৎসবটি ১৬ অক্টোবর শুক্রবার শুরু হয়ে চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথমদিন আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাংসদ মাহবুব-উল আলম হানিফ উদ্বোধন করবেন পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলবে গানের উৎসব। দেশের খ্যাতনামা শিল্পী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাউলদের গানে গানে মুখরিত থাকবে ছেঁউড়িয়া প্রাঙ্গন।